বন বিভাগের এ উদ্যোগ আশা জাগায়

সম্পাদকীয়

বন সাবাড় হয়ে যাচ্ছে, পাহাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে, গাছ নিধন হয়ে যাচ্ছে—সব দিকেই কমছে পাখির আবাস। প্রকৃতিতে মানুষ ছাড়াও যে প্রাণ আছে এবং তাদেরও যে নিরাপদ, মুক্ত ও স্বাধীন জীবন আছে, তা কতটা গুরুত্ব পায় আমাদের কাছে? বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ছাড়া মানুষই–বা বাঁচবে কীভাবে?

পাখি ছাড়া আমাদের পরিবেশের কথা চিন্তা করলে একটা নির্জীব ও নিষ্প্রাণ ছবিই যেন ভেসে ওঠে। সেই পাখিদের জন্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে। মিরসরাইয়ে একটি পাহাড়ি বনভূমিতে দেড় লাখ দেশি ফল গাছের এক বাগান তৈরি করেছে তারা। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক।

পাখিসহ জীববৈচিত্র্যের জন্য এখন একমাত্র ভরসা পাহাড়ের বনজঙ্গলগুলো। সেখানেও পড়ছে মানুষের আঘাত। সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ডে সেই বনজঙ্গলের পরিমাণ কমছে। সেখানে বন বিভাগের দায়ও কম নয়। তবে দায়মোচন থেকে হোক বা নিজস্ব কাজের অংশ থেকে হোক, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় মিরসরাই উপজেলার মহামায়া হ্রদ এলাকায় ৬০ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমিতে পাখিদের জন্য এ বাগান তৈরি করেছে।

একসময় বন-পাহাড়ে পাখি-প্রাণীদের খাবারের অভাব ছিল না। এখন বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্যের খাবারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মহামায়া হ্রদ এলাকার ফলের বাগান অনেক পাখির খাদ্যঘাটতি পূরণ করবে।

এ ছাড়া এ বাগান যখন সবুজ বনাঞ্চলে রূপ নেবে, অন্য প্রাণীদের জন্যও নিরাপদ বাস্তুসংস্থান তৈরি হবে সেখানে। ইতিমধ্যে বাগানটিতে লাগানো হয়েছে পাখিদের পছন্দের ফল ঢাকিজাম, পুঁতিজাম, কালোজাম, বর্তা, থনা, বট, কদম, আমলকী, চাপালিশ, হরীতকী ও বহেড়ার মতো ফল গাছ। চলতি বছরের মে, জুন ও জুলাইয়ে লাগানো এসব গাছ এখন পরিচর্যার পর্যায়ে আছে। কয়েক বছর পর থেকে এসব গাছ ফল দিতে শুরু করবে। তখন ফল খেতে আসা পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠবে মহামায়া হ্রদ এলাকার এ সবুজ বনাঞ্চল।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মিরসরাই রেঞ্জের কর্মকর্তা শাহানশাহ নওশাদ প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যসংকটের কারণে বন্য পশুরা বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। পাখিরা উদ্বাস্তু হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে। বনে পশুপাখির খাদ্যসংকট দূর করতে নেওয়া বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে এ বাগান এলাকা হয়ে উঠবে পাখিদের স্বর্গরাজ্য।

আমরা আশা করব, শুধু বাগান তৈরি ও গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করবে না বন বিভাগ। বাগানটি পরিপূর্ণ করে তুলতে যাবতীয় পরিচর্যা চালিয়ে যাবে এবং সংরক্ষণ করে যাবে। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের মতো বন বিভাগের অন্যান্য অঞ্চল ও রেঞ্জেও এভাবে পাখির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা হোক।