অগ্নিনিরাপত্তা জোরদারে সময়ক্ষেপণ নয়

সম্পাদকীয়

বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, দেশের বড় বড় পোশাকবাজার বা পোশাকপল্লিগুলো কী পরিমাণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকায় তো অবশ্যই, বড় শহরগুলোর অন্যান্য মার্কেট ও পোশাকপল্লি নিয়ে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে আছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা দেশে তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজারটিও।

এখানে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শোরুম ও ৫ হাজার কারখানা। কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন সেখানে। আর সব সময় ক্রেতাদের পদচারণ তো লেগেই থাকে। পোশাকপল্লিটিতে যদি কোনো কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে, তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

বঙ্গবাজারেই সেটি আমরা দেখেছি, যেখানে পাশেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে ঝুঁকিতে থাকা কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লি নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে এ পোশাকপল্লির বিস্তৃতি। সেখানকার প্রতিটি ভবন একটি আরেকটির গা ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে।

ভবনের সিঁড়ি সব অপ্রশস্ত আর সড়কগুলোও সরু। এ ছাড়া ভবন ঘেঁষে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক তারের জটলা। এমন অগ্নিঝুঁকির মধ্যেই সেখানকার কার্যক্রম চলছে। কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য, কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। পোশাকপল্লিটির অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও গার্মেন্টস মালিক সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে।

বঙ্গবাজারে অগ্নিদুর্ঘটনার পর প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলছেন, অগ্নিকাণ্ড বা যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা এবং সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা ও সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা তৈরি না করে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায় না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে শ্রমিকদের বক্তব্য হচ্ছে, ভবনমালিক, কারখানার মালিক, দোকানিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ পোশাকপল্লিতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বঙ্গবাজারের মতো অগ্নিকাণ্ড।

অভিযোগ আছে, পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বেশির ভাগ ভবন নির্মাণ করা হয়নি। অতএব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসায়ী মহল ফায়ার সার্ভিসকে দু-তিন মাস পরপর ফায়ার সার্ভিসের মহড়া ও প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

আমরা আশা করব, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্প্রতি পোশাকপল্লিটি পরিদর্শন করে বলেছেন, জনগণের স্বার্থে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন দেখার অপেক্ষা, তিনি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।