বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াবে কীভাবে

সম্পাদকীয়

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে চার ঘণ্টা ধরে এক ছাত্রীকে নির্যাতন করার ঘটনায় উচ্চ আদালত বিসিএস কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে বুধবার একটি রিট করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলের পাশাপাশি কয়েক দফা নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেন। 

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নিগ্রহের শিকার ওই ছাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে মেয়েটি ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ম রক্ষার তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেটি কার্যক্রম শুরু করেনি। নিগ্রহের শিকার মেয়েটিকে দেখতেও দেখতেও কেউ যাননি। এটা খুবই দুঃখজনক।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ওই ছাত্রীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রী মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের। 

তাঁর ভাষ্যমতে, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এ জন্য তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর কাছে অতিথি হিসেবে থাকেন। বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী হাত তোলেন। হলে ওঠার বিষয়টি আগে না জানানোয় তাবাসসুম চটে যান। ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে হলের গণরুমে (দোয়েল) ওই ছাত্রীকে ডেকে নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী। সেখানে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল তাঁকে নানাভাবে নির্যাতন করে।

যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য, তাঁরা ছাত্রলীগের নামে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আগে এ ত্রাসের ঘটনা ছাত্র হলেই সীমিত ছিল। সাম্প্রতিক কালে সেটি ছাত্রী হলেও ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক মাস আগে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হলেও তার বিচার হয়নি। বিচারহীনতার কারণেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চার শিক্ষার্থীকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে মেরে কাউকে না বলার জন্য হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। ক্যাম্পাসে যখন একটি মেয়ে নিগ্রহের শিকার হন, তঁার নিরাপত্তা দেওয়া এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব।

কিন্তু তঁারা সেই দায়িত্ব পালন করেননি বলে মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে যেতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি নীতিনৈতিকতা সম্পূর্ণ বিসর্জন না দিয়ে থাকে, তাহলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি। 

কর্তৃপক্ষের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্রলীগ নামধারীরা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে। ফলে এর দায় সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকেই নিতে হবে।