ইজারা বাতিল ও অন্য অংশ পুনরুদ্ধার চাই

সম্পাদকীয়

আইন করে সব ধরনের জলাশয় ভরাট ও দখল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপরও ব্যক্তিগত পুকুরগুলো রক্ষা করা তো যাচ্ছেই না, সরকারি পুকুরগুলো পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে পুকুর ভরাট ও দখলের সুযোগ করে দিচ্ছে।

যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরে। সেখানে রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত একটি সরকারি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এর বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় সুধী সমাজ আপত্তি জানিয়েছে। স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষও তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আগে থেকেই এক পাশে মার্কেট করে পুকুরটি সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। এখন পুকুরটির আরেক অংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ ইজারা দিয়েছে। পুকুরটির দখল হওয়া অংশ পুনরুদ্ধার না করে জেলা পরিষদ বরং আরেক অংশ ভরাট করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। যারাই রক্ষক, তারা যদি এভাবে ভক্ষক হয়, তাহলে দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ কীভাবে টিকে থাকবে।

আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যেখানে উপজেলা পরিষদ পুকুরটি রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে জেলা পরিষদ এমন পরিবেশবিধ্বংসী ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন বলছেন, শতবর্ষী পুকুরটি রায়েন্দা বাজারের কয়েক হাজার মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করে। সংরক্ষিত এ পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষও বন্ধ আছে। এই পুকুর জেলা পরিষদ কীভাবে ইজারা দেয়, তা বোধগম্য নয়।

দুই পাশ সংকুচিত হয়ে গেলে পুকুরটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জেলা পরিষদ অনৈতিকভাবে পুকুরটি ‘হত্যা’ করতে চাইছে। উপকূলে যেখানে মিঠাপানির তীব্র সংকট, সেখানে মিঠাপানির একটি আধার এভাবে বিনষ্ট হলে সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়বে।

সরকারি পুকুরটি রক্ষায় আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। স্থানীয় সুধী সমাজকে নিয়ে গড়ে ওঠা শরণখোলা পুকুর-জলাশয় রক্ষা কমিটিও ইজারা বাতিলের আবেদন করেছে। এর আগে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধন করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে জেলা পরিষদ পুকুরের ওপর মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। সাময়িক স্থগিতাদেশের মাধ্যমে কি তাহলে পরবর্তী সময় মার্কেট নির্মাণের সুযোগ রাখা হলো?

সেখানে কেন ইজারা বাতিল হবে না? জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কীভাবে এই ইজারা দিলেন, সেই জবাবদিহি তাঁকে করতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? শুধু তাই নয়, মার্কেট অপসারণ করে দখল হয়ে যাওয়া পুকুরের অন্য অংশও পুনরুদ্ধার করা হোক।