বিশ্বে দূষিত বায়ুর দেশ বা শহরের শীর্ষ তালিকায় চলে যাচ্ছি আমরা বারবার। এর জন্য গুরুতরভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে ইটভাটাগুলোকে। কিন্তু একটি ইটভাটা বসানো ও পরিচালনায় কতটা সরকারি আইন ও বিধিমালা মানা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইটভাটাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে সরকারি কর্তৃপক্ষ আছে, তাদের অক্ষমতাও নতুন কিছু নয়। সেখানে অনেক সময় অবহেলা, অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি—সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
খোদ পরিবেশমন্ত্রীও জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেন, দেশের ৬০ শতাংশ ইটভাটাই অবৈধ বা অনুমোদনহীন। ফলে দেশের পরিবেশের কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেটি দূরে নগরে বসে বোঝার সাধ্য নেই কারও। এর প্রধান শিকার হয়ে থাকেন কৃষকেরা আর গ্রামের মানুষ। এর থেকে কি আসলে কোনো পরিত্রাণ নেই? অবশ্যই আছে। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা, যা আমরা দেখতে পেলাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে। সেখানকার অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ হওয়ায় ফিরে এসেছে সবুজের সমারোহ। নিঃসন্দেহে এটি সুখকর একটি ঘটনা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইটভাটার কারণে কালিয়াকৈর উপজেলার শাহবাজপুর, ডুবাইল, সোনাখালী ও দরবাড়িয়া গ্রামের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় গত বছর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চারটি গ্রামের সাতটি ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। সেটির সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষক ও গ্রামবাসী। এ বছর ওই ৪ গ্রামের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।
বর্তমানে এসব জমিতে শর্ষে, ভুট্টা, ধানসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে। সেখানকার কৃষকদের ভাষ্য, ‘আশপাশের সবাই আগে ইটভাটার কাছে জমি ভাড়া দিত। যার কারণে আমাকেও ২০ বিঘা জমি ইটভাটার মালিকদের কাছে ভাড়া দিতে হয়েছে। এ বছর ইটভাটা নেই, তাই সব জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। আগে চারপাশে ধুলাবালু ছড়িয়ে থাকত, আর এখন চারদিক সবুজে ভরে গেছে।’
এটি জানা কথা যে ইটভাটার মালিকেরা কৃষকদের জোর করে বা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়ে তোলেন। এমনকি কৃষিজমির মাটিও চলে যায় ইটভাটায়। এতে কৃষকদের স্বল্প মেয়াদে লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে বহুমুখী ক্ষতি হয়ে যায়।
কালিয়াকৈরের এসব গ্রামের কৃষকেরা দেরিতে হলেও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। বিষয়টি অবশ্যই একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। অন্যান্য এলাকার কৃষকদের জন্যও এটি অনুসরণীয় বিষয় হিসেবে থাকবে।
অবৈধ ইটভাটা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যর্থতার কথাই বারবার উঠে আসে। সেখানে কালিয়াকৈরে এমন একটি নজির রাখায় আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করব, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে গোটা দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এমন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।