আমরা কে না জানি, বন্যেরা বনে সুন্দর আর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। অথচ সেই বনের প্রাণীদের খাঁচায় পুরে রাখা হয় আর মায়ের কোলে চড়ে শিশুরা সেগুলোকে দেখতে যায়। মানুষের বিনোদনের জন্য পশুপাখিকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় পুরে রাখা হয়, আধুনিক সমাজে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী আছে? কিন্তু খাঁচায় পুরে রাখা প্রাণীদের কি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয়? সেটি হয় না বলেই সিলেটের টিলাগড় এলাকায় একটি চিড়িয়াখানায় থাকা বন্য প্রাণীদের করুণ পরিস্থিতিতে আমাদের উদ্বেগ তৈরি হয়।
চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত হলেও এটি মূলত বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র। প্রায় দেড় মাস ধরে সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ইজারাদার লাপাত্তা। তিনি হচ্ছেন সিলেট মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সরকারি দলের দাপটে এই ইজারা নিয়েছিলেন মূলত ব্যবসার উদ্দেশ্যে। প্রাণীদের তদারকিতে কখনোই গুরুত্ব দেননি। ফলে দুটি জেব্রা, পাঁচটি ময়ূর ও চারটি খরগোশ মারা গেছে। চিড়িয়াখানার পরিবেশ কোনোভাবেই প্রাণিবান্ধব ও পর্যটকবান্ধব না হলেও টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য রাখা হতো এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হতো। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি খুবই গুরুতর।
বর্তমানে সংরক্ষণ কেন্দ্রটিতে ৩টি ময়ূর, ২০টি হরিণ, অজগর, ৪ ধরনের পাখি, মাছ মিলিয়ে ৪৪টি প্রাণী রয়েছে। নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দর্শনার্থী ভেতরে প্রবেশ করেন। খাঁচায় থাকা প্রাণীগুলোকে কৌতূহলবশত মানবখাবার দিচ্ছেন, যা প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আবার কেউ কেউ প্রাণীগুলোকে অহেতুক বিরক্ত করছেন। এর মধ্যে একটি অজগরকে খুঁচিয়ে আহত করার ঘটনাও ঘটেছে। খাঁচা বেহাল হওয়ায় পাখিগুলো উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বন বিভাগের প্রাণিচিকিৎসক নেই। ফলে কোনো প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই প্রাণীর জীবন নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেয়। জনবল কম থাকায় কর্মীরা সার্বক্ষণিক প্রাণী ও দর্শনার্থীদের নজরদারি করতে পারেন না। বরং নিজেরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদার ইজারা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। বন বিভাগের পক্ষ থেকে শর্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে ইজারার কিস্তির টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। বন বিভাগের জনবল কম। এরপরও সংরক্ষণ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। জনবলসংকট কাটিয়ে ইজারাদারকে বাদ দিয়ে শিগগিরই সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা ও খাস সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আমরা আশা করব, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে চিড়িয়াখানাটির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হলেও সেখানে কোনোভাবেই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, সেটিও নিশ্চিত করা হবে। আমরা চাই না চিড়িয়াখানাটির কোনো প্রাণী মারা যাক বা অযত্নে থাকুক।