সংকটাপন্ন প্রাণীটির সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

দেশের সংকটাপন্ন প্রাণীর মধ্যে অন্যতম লজ্জাবতী বানর। সিলেট ও চট্টগ্রামের কিছু অঞ্চলের বাসিন্দা এরা। তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনজঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়া ও জনবসতি বেড়ে যাওয়ার কারণে এ প্রাণীর আবাসস্থল কমেছে। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোতে এখনো কিছু লজ্জাবতী বানরের আবাস আছে। দুঃখজনক হচ্ছে, এ প্রাণীটি প্রায় সময় লোকালয়ে চলে আসছে এবং সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়ছে। আর চোরাকারবারিদের শিকার তো হতেই হচ্ছে। জাতীয় উদ্যান ও বনাঞ্চলের আশপাশে বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়েও হতাহত হচ্ছে প্রাণীটি। এতেই বোঝা যায়, লজ্জাবতী বানরের অস্তিত্ব এ দেশে কী রকম ঝুঁকির মুখে আছে।

এর মধ্যেও সিলেটে নানা জায়গায় উদ্ধার হওয়া ১৫টি লজ্জাবতী বানরকে সেবা-শুশ্রূষা শেষে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। একপ্রকার ঘরেই ফেরা হলো বানরগুলোর। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মানুষের হাতে ধরা পড়া বা বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে আহত লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকীছড়া বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে। গত এক বছরে এ রকম ২৩টি বানর উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টিকে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। লজ্জাবতী বানরগুলো সংরক্ষণে মূলত কাজ করছে জার্মানিভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্লামপ্লরিস ইভি। ২০২২ সাল থেকে তাদের এ কার্যক্রম শুরু। এর পর থেকে উদ্ধার হওয়া লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে জানকীছড়া রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। সংস্থার লোকজন এই প্রাণীদের দেখাশোনা, চিকিৎসা, সেবা-শুশ্রূষা ও খাবারদাবারের বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

আগে আহত লজ্জাবতী বানরগুলো সেবা-শুশ্রূষার অভাবে মারা যেত। এখন সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার কারণে বানরগুলোকে বাঁচানো যাচ্ছে। এটি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। মূলত বন্য প্রাণী রক্ষায় আগের চেয়ে বেশি সচেতনতা তৈরি হওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। এর জন্য বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, প্রাণীপ্রেমী, পরিবেশকর্মীদের আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে একটি রেসকিউ সেন্টার যে কী পরিমাণ কার্যকর হতে পারে, তার বড় উদাহরণ জানকীছড়ার সেন্টারটি। শুধু লজ্জাবতী বানর নয়, আরও বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় সেটি ভূমিকা রাখুক, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আমরা এতগুলো লজ্জাবতী বানর নিরাপদে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্লামপ্লরিস ইভিকে অভিবাদন জানাই।