মাছের রোগ প্রতিরোধে বিকল্প উপায় খুঁজুন

সম্পাদকীয়

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পানির লবণাক্ততা বরাবরই দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। সমুদ্র থেকে যে লবণাক্ত পানি আসে, সেটা কমাতে পারে উজান থেকে আসা নদীর স্বাদুপানি। একদা এসব নদীতে বাঁধ ছিল না বলে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ সহনীয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে উজানে প্রায় সব বড় নদীতে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ কমে গেছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে।

এ সংকটের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে উত্তরাঞ্চলের পানিতেও লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার খবরটি। এর কারণ উত্তরাঞ্চলের পুকুরে মাছ চাষে লবণের ব্যবহার। পাউবোর সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। পানি, মাটি ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা একে ‘বিস্ময়কর’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলছেন। সুপেয় পানি, চাষাবাদ, সর্বোপরি উত্তরের মানুষের জীবনযাপনের ওপর লবণাক্ততা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ৬টি উপজেলার ৪৯টি পুকুরের কাছে ১০০ ফুট গভীরের পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয় গবেষণায়। ইসি বা ইলেকট্রিক্যাল কনডাকটিভিটি হলো মাটিতে লবণাক্ততা মাপার সাধারণ পদ্ধতি। লবণাক্ততা বেশি হলে ইসির পরিমাণ বাড়ে। বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী সুপেয় বা খাওয়ার পানির ক্ষেত্রে ইসি প্রতি সেন্টিমিটারে ২০০০ মাইক্রোসিমেন্স হলে তা সহনীয় মাত্রার মধ্যে পড়ে। আর চাষের পানির জন্য এর মাত্রা প্রতি সেন্টিমিটারে ৩০০০ মাইক্রোসিমেন্স। ৪৯টি পুকুরের নমুনার কোথাও ২০০০-এর ওপরে পাওয়া যায়নি। কিন্তু যেখানে আগে ২০০ থেকে ৩০০ মাইক্রোসিমেন্স ছিল, সেখানে দ্বিগুণ বা তিন গুণের বেশি হয়ে গেছে।

যেসব পুকুরে দীর্ঘ সময় ধরে লবণ ব্যবহৃত হয়, যেগুলোয় কম সময় ধরে ব্যবহৃত হয় এবং যেগুলোয় একেবারেই হয় না—এমন তিন ধরনের পুকুরের নিকটবর্তী ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, যেসব পুকুরে দীর্ঘ সময় ধরে মাছ চাষ হয় এবং লবণের ব্যবহার আছে, সেগুলোর কাছের ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা অপেক্ষাকৃত বেশি।

পানিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, গবেষণাটি প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া একেবারে নতুন এক বিপদের দিকে আমাদের সজাগ করেছে। এভাবে লবণাক্ততা বাড়তে থাকলে পানির স্বল্পতায় থাকা উত্তরাঞ্চলে সমস্যা বাড়তে পারে। শস্য উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জি এম মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, মাটির অন্তঃপ্রবাহের মাধ্যমে লবণাক্ত পানি যেমন ছড়াতে পারে, আবার পুকুরগুলো বন্যার সময় উপচে আশপাশের এলাকায় চলে যেতে পারে। এভাবেও লবণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

লোনাপানিতে চিংড়ি চাষ করে আমরা দক্ষিণাঞ্চলে ফসলি জমি ধ্বংস করেছি। এখন উত্তরাঞ্চলের পুকুরে মাছ চাষের নামে এন্তার লবণ ব্যবহার করে সেখানকার কৃষিকেও বিপদে ফেলতে পারি না।

যদি মাছ চাষে লবণ ব্যবহারের জন্য পানির লবণাক্ততা বেড়ে যায়, সেটা বন্ধ করতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলের মতো উত্তরাঞ্চলের পানিও লবণাক্ততার কারণে কৃষি ও পরিবেশ ধ্বংস হোক, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উত্তরাঞ্চলে মাছের রোগ প্রতিরোধে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লবণ ব্যবহার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে পারি।