প্রায় সোয়া দুই কোটি জন–অধ্যুষিত ঢাকা শহরে নিত্য যানজটে নাকাল মানুষ। কর্মদিবস তো বটেই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও যানজট লেগে থাকে। এর ওপর প্রায় প্রতিদিনই শহরের কোথাও না কোথাও বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন। ফলে ঢাকা শহরের জনজীবন প্রায় নিশ্চল হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহের শুরুতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক–রেললাইন অবরোধ করলে শহরে দুর্বিষহ যানজট তৈরি ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে বাইরের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। বুধ ও বৃহস্পতিবার নগরবাসী একই রকম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঢাকার মহাখালীতে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। অবরোধের এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় ভাঙচুর করা হয়। আগারগাঁওয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা। বছিলা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, ডেমরাসহ বিভিন্ন জায়গায় রিকশাচালকেরা অবস্থান নেওয়ায় নগরজুড়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়।
গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই দিন রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম নামের এক ছাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে বুধবার ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের কারণে পুরো এলাকা হয়ে পড়ে স্থবির।
এই যে প্রায় প্রতিদিন ঢাকা শহরের কোথাও না কোথাও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে, এর প্রতিকার কী। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী করছে? ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে যেমন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্ব আছে, তেমনি দায়িত্ব আছে সিটি করপোরেশনেরও। সড়ক অবরোধ করলে যে লাখ লাখ মানুষ মহাভোগান্তিতে পড়েন, সেটা নিশ্চয়ই তাঁদের অজানা নয়। তাঁদের উচিত আন্দোলনকারী পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসা। আর আন্দোলনকারীদেরও কথায় কথায় জনজীবন অচল না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
অযান্ত্রিক রিকশাচালকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশ দেননি। তাঁরা বলেছেন, বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক। বিধিনিষেধ মানে কোথায় এই যান চলতে পারবে আর কোথায় পারবে না, সেটা পরিষ্কার করা। যে পেশার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য জড়িত, তাঁদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ব্যাটারিচালিত রিকশা পুরোপুরি বন্ধ করা কতটা সমীচীন, তা–ও ভেবে দেখার বিষয়।
কোনো জনগোষ্ঠী দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য ঢাকা শহরকে অচল করে দেবে, সেটা যেমন আমরা সমর্থন করি না, তেমনি ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জীবিকার পথও আকস্মিক বন্ধ হয়ে যাবে, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও একবার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা সেটা রক্ষা করতে পারেনি।
অতএব ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধান সড়কে এই যান চলাচল বন্ধ রেখে অলিগলির জন্য চালু রাখা যেতে পারে। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে, এটাই প্রত্যাশিত। যানজট সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে যানজট আরও বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।