সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 

সম্পাদকীয়

একজন আদর্শবান বাবা তো এমনই হন। প্রতিটি সন্তানকে তিনি সুশিক্ষিত করেছেন, একইভাবে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিতও করেছেন। বলছিলাম রাজশাহী শহরের বাসিন্দা মীর মোজাম্মেল আলীর কথা, যিনি রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। একজন আদর্শ শিক্ষকই বটে। চার সন্তানের তিন মেয়েকে গড়ে তুলেছেন চিকিৎসক হিসেবে। ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেলকে নিয়ে শুরু করেছেন দারুণ উদ্যোগ, যার মাধ্যমে এক টাকা ভিজিটেই রোগীরা পাচ্ছেন চিকিৎসা। দুস্থ ও অসহায় রোগীদের জন্য এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণ সাড়া ফেলেছে। মানুষের সেবা করার যে স্পৃহা, সেটির বাস্তবায়নই আমরা দেখতে পাই বাবা-মেয়ের এ যৌথ উদ্যোগে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ২০২০ সালে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। সম্প্রতি তিনি রাজশাহীর সাহেববাজারে তাঁর বাবার ওষুধের দোকানে বসে এক টাকায় রোগী দেখা শুরু করেছেন। দিনে গড়ে ২০ জনের বেশি রোগী দেখছেন। প্রাথমিকভাবে দেখে রোগীকে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। আর জটিল সমস্যা থাকলে ওই রোগীদের কোথায়, কার কাছে যেতে হবে, তা বলে দিচ্ছেন। করোনার সময় থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন সুমাইয়ার। তখন কয়েকজন মিলে ‘দ্য ফাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করছেন। উদ্যোক্তা সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। রোগী দেখে যা পাওয়া যাবে, তাই দিয়ে এ সংগঠনের কাজে সহায়তা করা হবে। 

এক টাকার চিকিৎসার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলে অনেকে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে নিয়েছেন। কারও মতে, জনপ্রিয় হতে এমন উদ্যোগ। আবার কেউ বলছেন, এমন কার্যক্রম বেশি দিন টিকবে না। তবে মীর মোজাম্মেলের ভাষ্য, এর মধ্যে বাইরের চারজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁরাও এক টাকায় রোগীদের সেবা দিতে চান। আর বাকি দুই চিকিৎসক মেয়ে তো আছেন, তাঁরাও পরে যুক্ত হবেন। ফলে উদ্যোগটি চলমান রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করছেন।

অল্প বয়সে অনেকেরই জীবনের লক্ষ্য থাকে বড় হয়ে একজন শিক্ষক ও একজন চিকিৎসক হওয়া। কারণ, তাঁরা যেভাবে সমাজ আলোকিত করেন বা মানুষকে সেবা দেন, তা সহজে মানুষের মধ্য দাগ কেটে যায়। মোজাম্মেল ও তাঁর মেয়ের এ অসাধারণ উদ্যোগটি আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে। এ ছাড়া দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সুমাইয়াদের মতো চিকিৎসকদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি বড় একটি উদাহরণ। এই বাবা-মেয়ের প্রতি আমাদের অভিবাদন রইল।