একটা সময় ছিল, সমাজের মানুষের দেখভাল করত সমাজই। এর জন্য গড়ে তোলা হতো সামাজিক সংগঠন। গ্রামে গ্রামে এ রকম সামাজিক সংগঠনের অস্তিত্ব এখনো আছে। তবে সামাজিক উন্নয়নে আগের সেই তেজ নেই বললেই চলে। সবকিছু এখন রাজনৈতিকীকরণ হওয়ায় সামাজিক সংগঠন গুরুত্ব হারিয়েছে।
সামাজিক সংগঠন একটি সমাজকে এগিয়ে নিতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, তার একটি নমুনা দেখা গেল মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি ইউনিয়নে। সেখানে গ্রামীণ রাস্তা উদ্ধার করে নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন সমাজের মানুষ। এমনকি কৃষিজমিতে সেচের জন্য রাস্তার দুই পাশে ছোট খালও খনন করা হয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।
উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের রাস্তাটির কথা এত দিন উল্লেখ ছিল ৭০ বছর আগের ভূমি জরিপের রেকর্ড ও মানচিত্রে। পশ্চিম রাউৎগাঁওয়ে রাস্তার দেড় কিলোমিটার জায়গা কৃষিজমির মালিকেরা প্রতি মৌসুমে একটু একটু করে কেটে তাঁদের জমিতে ঢুকিয়ে ফেলেছেন। এ কারণে রাস্তাটি প্রায় অস্তিত্ব হারায়। প্রায় পাঁচ যুগ ধরে রাস্তাটির অস্তিত্ব না থাকায় চলাচলে ভোগান্তি তৈরি হয়েছিল এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন রাউৎগাঁও ফ্রেন্ডস ক্লাব ও এর সভাপতি মোস্তফা ইবনে মিরাজ রাস্তাটি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ঢুকিয়ে ফেলা রাস্তা আবার বের করে আনতে গিয়ে কোনো অশান্তি তৈরি হয় কি না, সেই শঙ্কাও কাজ করছিল তাঁর মধ্যে। এ নিয়ে এলাকার মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করেন মোস্তফা, সবার সম্মতিও পান। এরপরও কোনো ধরনের অশান্তি এড়াতে আগে নিজের বাড়ির সামনে থেকেই রাস্তার কাজ শুরু করেন। তখন অন্যরাও ধীরে ধীরে এগিয়ে আসেন। রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেন। শুধু তা-ই নয়, নিজেরাই চাঁদা তুলে রাস্তাটি পুনর্নির্মাণ করেন সবাই মিলে।
কৃষিজমিতে সেচ ও বর্ষায় পানিনিষ্কাশনের জন্য রাস্তার দুই পাশে ছোট খালও খনন করেছে গ্রামবাসী। ওই এলাকায় আউশ-আমনের মৌসুম শেষে জমি খালিই পড়ে থাকত। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় সবজি ও বোরো আবাদ করা সম্ভব হয় না। এখন রাস্তার পাশ দিয়ে খাল হওয়ায় সেচের সুবিধা পাওয়া যাবে। এখন গ্রামবাসীর প্রত্যাশা রাস্তায় ইট বিছানো অথবা পাকা করার উদ্যোগ নেবে সরকারি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশা করি গ্রামবাসীকে নিরাশ করবেন না।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সংগঠিত হলে পরিবর্তন আসবেই, স্থানীয়ভাবে তারই একটি নমুনা বলা যায় এ রাস্তা নির্মাণকে। আমরা রাউৎগাঁও ফ্রেন্ডস ক্লাব, এর সভাপতি মোস্তফা ইবনে মিরাজ এবং এ কাজের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অভিবাদন জানাই। সামাজিক উন্নয়নের এই স্পৃহা সেখানে অটুট থাকুক এবং অন্যদের জন্যও অনুসরণীয় হোক।