অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রশংসনীয় প্রকল্প হচ্ছে ভূমিহীনদের ভূমি ও ঘর প্রদান। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গোটা দেশে বিভিন্ন জেলায় কয়েক লাখ পরিবারকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ নতুন ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রশংসার পাশাপাশি কিছু অনিয়ম নিয়েও এ প্রকল্প সমালোচিত হয়।

তবে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি। এ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের থেকে অর্থ নেওয়া, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি, ঘর পেতে স্বজনপ্রীতির নানা অভিযোগ সামনে আসে। এর মধ্যে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিও পেয়েছেন ভূমিহীনের খাসজমি।

এ নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। পিরোজপুরের কাউখালীতে খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়া ১৩৭ জনের মধ্যে ৫৩ জনই ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও সচ্ছল।

একই জেলার ইন্দুরকানি উপজেলায় খাসজমি ও ঘর বরাদ্দ পাওয়া এক ধনাঢ্য ব্যক্তি তো সেই ঘরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও লাগিয়েছেন। এবার শরীয়তপুরের নড়িয়ায় এমন ঘটনা সামনে এল। সেখানকার কেদারপুরে রায়হান শরীফ নামের এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী রাসিদা রহমানকে ভূমিহীন হিসেবে ৪৬ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ভূমি বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী, যাঁদের ৯ শতাংশের বেশি জমি রয়েছে, তাঁরা সরকারের কৃষি খাসজমি বরাদ্দ নিতে পারবেন না। অথচ রায়হান ও রাসিদার দুই একরের বেশি জমি রয়েছে। পাকা দ্বিতল ভবনে বসবাস করেন তাঁরা। এমনকি তাঁদের রয়েছে মসলার কারখানা ও বিপণিবিতান।

কয়েক বছর আগে ব্যাপক নদীভাঙনের শিকার হয়ে কেদারপুরের সহস্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত সেসব লোক এখন ফসলি জমি, বাগান ও সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়ে ঝুপড়ি বেঁধে থাকছে। তাঁরা অনেকেই খাসজমির জন্য আবেদন করলেও পাননি। কিন্তু সেই জমি পেয়েছেন ধনাঢ্য দম্পতি রায়হান ও রাসিদা। এর জন্য তাঁরা নিজেরা নিজেদের ভূমিহীন হিসেবে প্রমাণ করেন।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভূমিহীন হিসেবে সনদ সংগ্রহ, সেই সনদ নিয়ে খাসজমি পাওয়ার জন্য আবেদন—সবই করেন। সেই আবেদন অনুসারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত করে সেই দম্পতি ভূমিহীন হিসেবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদনও দাখিল করেন।

এতেই বোঝা যাচ্ছে, এখানে সুস্পষ্টভাবে অনিয়ম হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা—সবাইকেই এর দায় নিতে হবে। ধনাঢ্য ওই দম্পতির খাসজমির বরাদ্দ বাতিল করা হোক। সেই সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা এ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।