মেহেরপুর প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক

সম্পাদকীয়

দেশের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে। এতে হতাহত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। ফলে এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে মানুষের সচেতনতা যেমন জরুরি, সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রির বিষয়টিতে মনিটরিংও গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সেটিই ঘটছে দেশের অনেক জায়গায়, বিশেষ করে মফস্‌সল শহরগুলোয়।

যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মেহেরপুর জেলা ও উপজেলা শহরগুলোয়। সেখানে মুদিদোকান থেকে শুরু করে ওষুধের দোকানে পর্যন্ত গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অনুমোদনহীনভাবে এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি চরম ঝুঁকি তৈরি করছে। বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জেলা শহর, সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও এলাকা ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক দেখেছেন, মুদিদোকান, তেলের দোকান, আবাসিক ভবন, পানের দোকান, ঝুপড়ি, চায়ের দোকান, এমনকি ওষুধের দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার ও পেট্রল। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশসহ জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলপিজি সিলিন্ডার গুদামজাত করা হয়েছে। অধিকাংশ দোকানে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র নেই। কিছু দোকানে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র ঝোলানো থাকলেও তা অকেজো ও মেয়াদোত্তীর্ণ।

অথচ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুত করতে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে। খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যায়। সে ক্ষেত্রে কেবল ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নিলেই হবে।

কিন্তু সেটিও মানছেন না অনেকে। ফলে দেখা গেছে, মেহেরপুর জেলা শহরসহ তিনটি উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে ৪০০টি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩৩টির। দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি বিক্রির যে নিয়মকানুন আছে, তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। আরও অবাক করা বিষয় হলো, অনেকে জানেনই না গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুতের জন্য কোনো ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নিতে হয়। নিয়মকানুনগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, জনবলসংকটের কারণে তাঁরা জেলা পর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি তদারক করতে পারছেন না। দেশে কোনো অনিয়ম চলতে থাকা ও সেসব বন্ধ না হওয়ার পেছনে জনবলসংকটের কথাই আমাদের বারবার শুনতে হয়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

তাহলে কি ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়া বিপজ্জনকভাবে এই সিলিন্ডার বিক্রি চলতে থাকবে? বিস্ফোরক পরিদপ্তর কেন স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার স্টেশনের সহায়তা নিচ্ছে না? সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে এখানে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ দ্রুত তৎপর হবে—এমনটিই আমরা আশা করছি।