নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা বাড়ান

গাজীপুরের শ্রীপুরের ব্যস্ততম মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক এখন সাধারণ মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। যেখানে সড়কপথ হওয়ার কথা নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম, সেখানে তা পরিণত হয়েছে ডাকাতদের আখড়ায়। সম্প্রতি এই সড়কে গজারিগাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা জনমনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় হাশিখালি সেতুর পশ্চিম পাশে এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন দুই যাত্রী। সড়কের ওপর দুটি বিশাল গজারিগাছ ফেলে পথরোধ করে দা হাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে একদল ডাকাত। ভাগ্যক্রমে দ্রুত অটোরিকশা ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তাঁরা। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; এর আগেও গত ৩ মার্চ একই সড়কে ডাকাতদের হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছিলেন।

স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন, হাশিখালি সেতুর আশপাশে ও বদনিভাঙা মোড়ে নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত নয়টার পর এই সড়কে চলাচল করতেও মানুষ ভয় পান। ডাকাতেরা অন্তত ৩০০ মিটার দূরত্বে দুটি স্থানে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল বারিক বলেছেন, বুধবার ডাকাতির প্রস্তুতিকালে খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয় এবং দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। 

পুলিশের এই তৎপরতা অবশ্যই প্রশংসনীয়; কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বারবার একই স্থানে এমন ঘটনা ঘটছে? কেন সাধারণ মানুষকে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে?

এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি জনবহুল ও ব্যস্ত আঞ্চলিক সড়কে যদি রাতের বেলায় মানুষ নির্ভয়ে চলাচল করতে না পারে, তবে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতিকেই নির্দেশ করে। কেবল ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশ পাঠিয়ে দুর্বৃত্তদের সাময়িক পলায়ন নিশ্চিত করা যথেষ্ট নয়। এখানে পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের নিয়মিত ও দৃশ্যমান টহল বাড়ানো হোক। এই ডাকাত দল কারা, তাদের মূল ঘাঁটি কোথায় এবং তাদের কার্যক্রমের ধরন কী—এ বিষয়ে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে কঠোর অভিযান চালানো হোক। সড়কের পাশের ঘন জঙ্গল, যা ডাকাতদের আত্মগোপনের সুযোগ করে দেয়, তা নিয়মিত পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। স্থানীয় জনগণ এবং পরিবহনচালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। 

আমরা আশা করি, গাজীপুরের শ্রীপুর প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক আবারও নিরাপদ হয়ে উঠুক এবং মানুষ নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।