সরঞ্জাম থাকলেও অস্ত্রোপচার কেন বন্ধ

সম্পাদকীয়

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষ এর সুফল কতটা পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, অনেক জায়গায় অবকাঠামো তৈরি করা হলেও সেগুলো পড়ে আছে।

অনেক জায়গায় দামি চিকিৎসাযন্ত্র পাঠানো হলেও পড়ে থাকতে থাকতে সেসব নষ্ট হচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় আছে চিকিৎসকসহ জনবলসংকট। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও জনবলের অভাবে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো স্থানীয়ভাবে উপজেলা হাসপাতাল নামে পরিচিত। উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের পসরা বসলেও সাধারণ মানুষের কাছে এখনো সরকারি হাসপাতালই বড় ভরসা। তা ছাড়া খরচের কারণে নিম্নবিত্ত মানুষ বা সামর্থ্যহীন মানুষের বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ নেই বললে চলে।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে যদি অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে, তাঁদের জন্য এর চেয়ে বড় ভোগান্তি ও দুর্ভোগ আর কিছু হতে পারে না। হয় তাঁরা চিকিৎসাবঞ্চিত থেকে রোগশোকে ভুগতে থাকেন, নয়তো অনেক পথ পাড়ি দিয়ে জেলা বা বিভাগীয় হাসপাতালে যেতে হয় তাঁদের অথবা ধারকর্জ করে বা জমিজিরাত বিক্রি করে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দৌলতপুরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অস্ত্রোপচারকক্ষে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও নেই অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক। ফলে বন্ধ রয়েছে সেখানকার অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। এর জন্য উপজেলার বাসিন্দারা তো ভুগছেনই, বেশি ভুগতে হচ্ছে প্রসূতিদের। শুধু অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসকই নন, এই হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। তার মানে শুধু অস্ত্রোপচারই বন্ধ নয়, অন্যান্য চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে তাঁদের। অনেক রোগীকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

১৯৮৩ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক ও লোকবল তেমন বাড়েনি। তাহলে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে কী লাভ হলো? দৌলতপুর উপজেলার জনসংখ্যা চার লক্ষাধিক। সে হিসাবে প্রতি ২৭ হাজার ৭৪৪ জনের জন্য চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। স্বাস্থ্যকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসাসেবা থেকে মানুষ বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। গোটা দেশেই কমবেশি এমন চিত্র আমরা দেখতে পাই।

দৌলতপুর উপজেলাটি নদীভাঙন এলাকা। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে এলাকাটিতে স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জনবলসংকট নিরসন করা হোক। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।