আক্কেলপুরে স্বাস্থ্যসেবার কেন এ দশা

সম্পাদকীয়

দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়া পর্যন্ত চলে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেবাটা কি মানুষ ঠিকঠাক পাচ্ছে? অনেক জায়গায় লোকবলের চরম সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে তা বলতেই হয়। বিশেষ করে চিকিৎসক–সংকটের কথা না বললেই নয়। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা চলছে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে। এটি কী করে সম্ভব, গোটা একটি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবায় আছেন একজন মাত্র চিকিৎসক। আসলে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ আছে ২৭টি। এর মধ্যে ২৪টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। কাগজে-কলমে তিনজন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন আসলে একজন মাত্র চিকিৎসক। তিন সপ্তাহ ধরে ওই একজন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সেটিই স্বাভাবিক। চিকিৎসা কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম আকন্দ একাই জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ সামাল দিচ্ছেন। এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২০০-২৫০ জন এবং অন্তর্বিভাগে ৬০-৭০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া একজন চিকিৎসকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও। রোগীদেরও কতটা সময় বা সেবা দিতে পারছেন তিনি?

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মেডিসিন, সার্জারি, স্ত্রীরোগ, শিশু, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, অ্যানেসথেসিয়া, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও হৃদ্‌রোগের চিকিৎসকের পদগুলো কয়েক বছর ধরে শূন্য। স্ত্রীরোগ, সার্জারি–বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকায় প্রসূতি অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ। অথচ হাসপাতালটিতে আছে অস্ত্রোপাচারকক্ষ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য কেনা চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু চিকিৎসক–সংকট নয়, আছে ওষুধসংকটও। হাসপাতালটিতে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ফলে অনেক রোগী ফিরেও যাচ্ছেন। অনেকে বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তাঁদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। কথা হচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ের একটি হাসপাতালে এতগুলো চিকিৎসক পদ কেন খালি থাকবে? জেলা সিভিল সার্জন এখানে কী ভূমিকা রেখেছেন তা আমরা জানতে চাই। দেশের উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক থাকা–না থাকা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। সরকারি নীতিনির্ধারকেরা এ নিয়ে নানা সময়ে কঠোর বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু দিন শেষে আমরা দেখছি উপজেলা পর্যায়ে এভাবে চিকিৎসক পদ শূন্য থাকছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করা হোক।