রাজধানী ঢাকা কমবেশি আড়াই কোটি মানুষের বসবাস। যাঁদের বেশির ভাগ পানির চাহিদা পূরণের জন্য ঢাকা ওয়াসার ওপর নির্ভরশীল। যদিও সেবা প্রদানে ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম নগরবাসীর কাছে কোনোকালেই সন্তোষজনক ছিল না, এখনো নেই। তা ছাড়া নিয়োগ–বাণিজ্য, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থানা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এখন নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ উঠল, যা খুবই খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালামকে প্রতিষ্ঠানটির নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। এই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তির শর্ত শিথিল করা, সাক্ষাৎকার গ্রহণ না করেই প্রার্থী তালিকা তৈরি, আবেদনকারীদের থেকে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। আর যাঁকে নিয়োগের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে এই সবকিছু করা হচ্ছে, সেই আবদুস সালামের বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতির অভিযোগ। যদিও তাঁর দাবি, এ অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিগত সরকারের আমলে ১৫ বছর ধরে ওয়াসার এমডি পদ আঁকড়ে ছিলেন তাকসিম এ খান। তাঁর সময় দুর্নীতি, অনিয়ম, সরকারি অর্থের অপচয়সহ বহু অভিযোগে জর্জর ছিল ওয়াসা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাকসিম এ খান পদত্যাগ করার পর এখন পর্যন্ত স্থায়ী একজন এমডি পায়নি ওয়াসা। এখন পদটি শূন্য। অভিযোগ আছে, পছন্দের লোক নিয়োগের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। ওয়াসায় যে পরিমাণ প্রকল্পের কাজ ও অর্থ বরাদ্দ হয়, সেখানে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে। ফলে সুযোগসন্ধানীরা স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন নিজেদের পছন্দের লোক যেন নিয়োগ পান।
ঢাকা ওয়াসায় এ নিয়োগের জন্য যুক্ত আছে ‘কর্মসম্পাদন সহায়তা কমিটি’। এ কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আর সদস্যসচিব হচ্ছেন ঢাকা ওয়াসার সচিব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ কমিটি কেন এমন পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, যার মধ্য দিয়ে আবদুস সালামের এমডি হিসিবে নিয়োগ পাওয়া নিশ্চিত হয়। এখানে কি তাহলে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় যুক্ত? আবদুস সালামকে নিয়োগ দিতে যে চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহি প্রদর্শনের আওতায় আনা উচিত।
তাকসিম এ খানের নিয়োগ এবং তাঁর আমলে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তাঁর বিরুদ্ধে কিছুই করা যায়নি। নতুন করে অনিয়মের মাধ্যমে কোনো নিয়োগ আমরা চাই না। এমন প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুর্নীতির রাস্তা আরও প্রশ্রস্ত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা উদ্বেগের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের প্রতি বিষয়টির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।