অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

দেশজুড়ে বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানে কতটা টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ দেশে খুব কম উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই আছে, যেখানে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতি হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৃতভাবেই নদীমাতৃক দেশ।

প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলা করে এ দেশের বিশাল একটি অংশের জীবন কেটে যায়। সেখানে বাঁধ ভেঙে যায়। দেরিতে হলেও বাঁধ সংস্কার হয় বা নতুন বাঁধ হয়। দুঃখজনক হলো, টেকসই বাঁধ হয় না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুই হয় অনিয়ম ও দুর্নীতি দিয়ে।

যেমনটা আমরা দেখছি হবিগঞ্জের নদীর তীর সংরক্ষণের কাজে। চলমান প্রকল্পটির নিম্নমানের কাজ নিয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিবছর বর্ষাকালে কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানীনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোট ১০টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টরের ফসল ও হাওরাঞ্চলের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেখানকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫৭৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দেশের কোনো প্রকল্পই যেন যথাসময়ে শেষ না করারই রেওয়াজ হয়ে গেছে। ফলে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এ প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি।

এরই মধ্যে হবিগঞ্জ অংশে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় কাজ চলমান অবস্থায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, নিম্নমানের পাথর ও বালু ব্যবহার করে এবং সিমেন্ট পরিমাণে কম দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লক নির্মাণ করে তা বাঁধে স্থাপন করে আসছে, যা দেখলেই বোঝা যায় কতটা নিম্নমানের কাজ। প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদনেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

পাউবোর বক্তব্য, কিছু স্থানে ব্লক নির্মাণে মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এএইচ ট্রেডিং করপোরেশনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। মোট ১১টি প্যাকেজে ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজগুলো পায়।

এখন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মকাণ্ডে গোটা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা শঙ্কিত। নিম্নমানের কাজ নিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

সেই সঙ্গে গোটা প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন কোনো অনিয়ম না হয়, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা চাই। এত বিপুল বরাদ্দের প্রকল্প ব্যর্থ হোক, আমরা চাই না।