মানুষের জন্য যে উন্নয়ন প্রকল্প, সেটি যদি মানুষেরই কাজে না লাগে, তাহলে এমন প্রকল্প ব্যর্থ হতে বাধ্য। অতীতেও এমনটি দেখা গেছে, বর্তমানেও এর অজস্র উদাহরণ আছে। যার একটি নমুনা হতে পারে কুমিল্লা নগরের দিবাযত্ন কেন্দ্র বা ডে-কেয়ার সেন্টার। দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে।
তাঁদের অনেকের সন্তানদের দেখভাল বা যত্নের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার জরুরি হয়ে পড়ে। সেটিকে গুরুত্ব দিয়েই মহিলা অধিদপ্তরের প্রকল্পে কুমিল্লার এ সেন্টার আট বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল।
কিন্তু যঁাদের জন্য সেটির কার্যক্রম শুরু হয়, তাঁরা সুফল পাচ্ছেন না। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এমন সেন্টার কী কারণে চালু করা হলো, সেটিই এখন প্রশ্ন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিম্ন আয়ের নারীদের সন্তানদের দেখভালের জন্য ২০১২ সালে কুমিল্লা নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় ভাড়াবাড়িতে প্রথমবারের মতো দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু হয়।
পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে পুরোনো মৌলভীপাড়ায় আরও বড় জায়গা ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। নগরের পুরোনো মৌলভীপাড়া এলাকায় অবস্থিত এ দিবাযত্ন কেন্দ্রে ৮০ শিশুর থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র ৮ জন। এ সংখ্যাই কেন্দ্রটির হতাশাজনক চিত্র প্রকাশ করে।
মূলত দিবাযত্ন কেন্দ্রটি সম্পর্কে এলাকার লোকজন জানেন না। এ ছাড়া কুমিল্লার এমন প্রান্তে দিবাযত্ন কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অযৌক্তিক। কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী এলাকার আশপাশের সেটির অবস্থান হলে কর্মজীবী মায়েরা তাঁদের সন্তানদের সহজে রাখতে পারতেন। বর্তমানে কেন্দ্রটি নগরের এক প্রান্তে অবস্থিত।
সেখানে কর্মজীবী নারী অপেক্ষাকৃত কম। খাবারদাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা, পড়াশোনা ও বিনোদনের ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকলেও দিবাযত্ন কেন্দ্রটি কুমিল্লার কর্মজীবী নারীদের তেমন কোনো কাজে আসছে না। দিবাযত্ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে শিশুদের ভর্তির জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয় কিন্তু শিশুরা এখানে ভর্তি হয় না। শিশুদের কেন্দ্রে রেখে আসতে ও নিয়ে আসতে যদি ভোগান্তি পোহাতে হয়, কেন সেখানে শিশুদের ভর্তি করানো হবে, সেই চিন্তা কি তঁারা করেছেন?
গত রোববার কেন্দ্রটি পরিদর্শনে গিয়ে অধিদপ্তরের উপপরিচালক জেসমিন আরা নিজেও স্বীকার করেছেন, কেন্দ্রটি ইপিজেড এলাকার পাশে হওয়া দরকার। তাহলে কর্মজীবী মায়েরা কাজ শেষে বাচ্চা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
কেন্দ্রটি অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। দেরিতে হলেও দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার এমন উপলব্ধি হলো।
এবার আমরা আশা করব, দ্রুত দিবাযত্ন কেন্দ্রটিকে উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। কুমিল্লা নগরের কর্মজীবী নারীরা যাতে এ কেন্দ্রের সুফল পান, সেটি দ্রুত নিশ্চিত করা হোক।