উত্তরখান–দক্ষিণখানে আর কত ভোগান্তি

সম্পাদকীয়

একটা শহরের সড়কগুলো ঠিকঠাক থাকবে; হাঁটতে–চলতে, গাড়ি নিয়ে যাতায়াতে কোনো অসুবিধা হবে না; এটি তো নগরবাসীর একেবারেই সাধারণ চাওয়া। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় এমন অনেক এলাকা আছে, সেখানে গাড়ি কী চলবে, হাঁটাই তো নিদারুণ কষ্টকর। এর মধ্যে সড়ক সংস্কারের নামে যখন মাসের পর মাস খোঁড়াখুঁড়ি চলে, দুর্ভোগ পৌঁছায় আরও চরমে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকায়। সেখানে দুটি সড়ক দেখলে মনে হয়, এ যেন যুদ্ধক্ষেত্র। লাখ লাখ মানুষ এখানে দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগের শিকার। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের সংস্কারকাজের কারণে উত্তরখান ও দক্ষিণখানের দুটি প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উত্তরখানের সড়কটি হচ্ছে উত্তরার আজমপুর রেলক্রসিং থেকে শাহ্ কবির মাজার চৌরাস্তা হয়ে উত্তরখানের চামুরখান মোড় পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার অংশে খননকাজ চলছে গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে।

দক্ষিণখানের প্রধান সড়কটিও প্রায় ছয় মাস ধরে বেহাল। এটির অবস্থান কসাইবাড়ি রেলক্রসিং থেকে দক্ষিণখানের মধুবাগ পর্যন্ত অংশ (এস এম মোজাম্মেল হক সড়ক)। এ পথের দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার। নালা নির্মাণের জন্য সড়কের মাঝবরাবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে খুঁড়ে রাখা সড়কের কিছু অংশে হাঁটার জায়গাটুকুও নেই। সড়কের খুঁড়ে রাখা অংশে নালার নোংরা পানি জমে দুর্ভোগ বেড়েছে আরও।

দুই সড়কেই এলাকাবাসীকে চলতে হচ্ছে কখনো নোংরা পানিতে পা ডুবিয়ে, আবার কখনো খনন করে ফেলে রাখা মাটির স্তূপ ডিঙিয়ে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা। স্থানীয় লোকজনের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় স্বজনদের। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকানিরা পণ্য আনা-নেওয়ায় পড়েছেন বড় বিপত্তিতে।

উত্তরখান ও দক্ষিণখান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে উত্তরের বিভিন্ন সেক্টরে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে শুধু এই দুই সড়কের ভোগান্তির কারণে। বৃষ্টি হলে তো স্কুল–কলেজে যাওয়ারই সুযোগ নেই।

নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, সড়কের যেকোনো এক দিক থেকে কাজ শুরু করলে এবং একটি অংশে কাজ শেষ করে পরের অংশে কাজ ধরলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কম হতো। কিন্তু দেশে নিয়মনীতি মেনে বা মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কি কোনো কাজ হয়! সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানাচ্ছে, দুটি সড়কের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে নভেম্বর পর্যন্ত। তার মানে এবারের বর্ষায়ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি নেই এলাকাবাসীর।

মানুষের ভোগান্তির দিকে তাকিয়ে সড়ক দুটির কাজ দ্রুত শেষ করুন।