শুল্ক কমিয়ে আমদানি বাড়ানো হোক

প্রতিযোগিতা কমিশনকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কাগজের সংকট নিয়ে তাদের কাছে ভোক্তা কিংবা ব্যবসায়ীদের কেউ ধরনা দেননি। তারপরও এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে; যেখানে ভুক্তভোগীরা খোলামেলাভাবে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন।

প্রকাশকদের অভিযোগ, গত এক বছরে কাগজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আড়াই গুণ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এত বাড়েনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কাগজের দাম এখনো অনেক কম। কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারির বইমেলায় যে বই প্রকাশের সংখ্যা অনেক কমবে এবং বইয়ের দাম বেড়ে যাবে বলে প্রকাশকেরা যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা-ও অমূলক নয়। গতবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ বই প্রকাশ হতে পারে। দাম বাড়তে পারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, ফেব্রুয়ারির বইমেলা ও জানুয়ারি মাসে নতুন পাঠ্যবই প্রকাশের সময়ই কাগজের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে কাগজ সরবরাহেও টান পড়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদক রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে টনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। প্রতি টন হোয়াইট নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এ কাগজের দাম ২০ হাজার থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। লেজার কাগজ প্রতি টনের দাম ৩০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ৬৪ হাজার থেকে বেড়ে ৮৫ হাজার টাকা হয়েছে। কম দামি এ কাগজের দাম গত দুই সপ্তাহে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।

এই দাম বাড়ানোর পেছনে মিলমালিকদের কারসাজি থাকার কথাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল পাল্পের যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, তার চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা।

বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। যখনই কোনো পণ্যের সরবরাহ বাজারে কম থাকে, তখনই সিন্ডিকেট বাড়তি মুনাফার জন্য ওত পেতে থাকে। তারা ভোক্তা সাধারণের সমস্যা আঁচ করতে পেরে পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। কখনো কৃত্রিম সংকটও তৈরি করে। কাগজের দামের ক্ষেত্রে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয় পক্ষের দায় আছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল থেকে কাগজ কম আসায় দাম বেড়েছে। আবার মিলমালিকেরা বলছেন, জ্বালানি ঘাটতির কারণে তাঁরা মিল ঠিকমতো চালু রাখতে পারছেন না।

কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে মিলমালিক কিংবা ব্যবসায়ী, যাঁদেরই কারসাজি থাকুক না কেন, সরকার চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। সংকট উত্তরণে সরকারের দায়িত্ব হবে মিলগুলো যাতে চালু থাকে, সে জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, কাগজের ওপর যে আমদানি শুল্ক আছে, তা কমানো হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশা করা যায়। মিলমালিক কিংবা ব্যবসায়ীরা যাতে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াতে না পারেন, সে জন্য তদারকিও জোরদার করতে হবে।