বেড়া উপজেলায় অনিয়ম নিয়ে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারির পর থেকে কয়েক দফা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। এতে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও হিমশিম অবস্থায় পড়ে যায়।

ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির ট্রাকের পেছনে আমরা দৌড়াতে দেখি সাধারণ মানুষকে। তৈরি হয় নানা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও। রাজনৈতিকভাবেও সমালোচিত হয়। টিসিবির পণ্য কেনার সেই দৌড়ের দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।

কারণ, সরকার এই পণ্য কিনতে এলাকায় এলাকায় সুবিধাভোগীদের জন্য কার্ড করে বিতরণ করেছে। সেই কার্ড দেখালেই পাওয়া যাচ্ছে টিসিবির পণ্য। যেহেতু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ কার্ড বিতরণ করছেন, সেখানে দলীয় প্রীতি ও স্বজনপ্রীতি দেখা যাচ্ছে। এমনকি অর্থের বিনিময়েও বিক্রি হচ্ছে সেই কার্ড। এমনটিই আমরা দেখছি পাবনার বেড়া উপজেলায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতির ধাক্কায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আয়ের তুলনায় বেড়ে গেছে ব্যয়। কার্ডধারীরা টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছেন। পণ্য পেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

৩০০ টাকা সাশ্রয়ের জন্য এমনটা কষ্ট করতে হচ্ছে তাঁদের। তবে কার্ডধারীদের বাইরেও অসংখ্য দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের আশায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ফিরে যাওয়া এসব মানুষের কেউ কেউ পণ্য না পেয়ে কেঁদে ফেলছেন। এ অবস্থায় টিসিবির কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠেছে।

বেড়া উপজেলায় টিসিবির পণ্যের জন্য ২২ হাজার ১০৫টি কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। প্রত্যেক কার্ডধারী মাসে একবার করে কম দামে ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই অভিযোগ উঠেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাঁদের অনুসারী ও পছন্দের লোকদের কার্ড দিয়েছেন। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্যকেও দেওয়া হয়েছে কার্ড।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য, দু-এক জায়গায় অতিরিক্ত কার্ড দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। তবে প্রশাসনের তদারককারী কর্মকর্তারা কঠোর দৃষ্টি রাখায় একই ব্যক্তি বা পরিবার অতিরিক্ত পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না।

টিসিবির কার্ড বিতরণ নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। সব জায়গায় এমনই বক্তব্য দিয়ে থাকে প্রশাসন। প্রকৃত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাই যেন এ কার্ড পান, সেটি নিশ্চিত করা হোক। এ ছাড়া কার্ডের সংখ্যা আরও বাড়ানো হোক।