গত জুলাই মাস থেকে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন ও এরপর সর্বজনীন পেনশনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্তিমিত হতে থাকে। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গত সরকারের নিয়োগ করা উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা অনিয়মের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমন বিলম্ব কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে বিভিন্ন ধাপে পদত্যাগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস (সিভাসু) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। শিক্ষকেরা বলছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অধ্যাদেশ ও আইন মেনে নিয়োগ হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্ত সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ। এ কারণে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটিতে পদটি খালি পড়ে আছে। দেশের অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হয়ে পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। সেদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এ তিন বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন সিভাসুর শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আরও দাবি হলো, নিজেদের ক্যাম্পাস থেকেই কোনো শিক্ষককে তাদের উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
নতুন সরকার গঠনের পর উপাচার্য নিয়োগের আগেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দিয়ে প্রশংসিত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। পরে সেখানে উপাচার্য নিয়োগ হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) সেদিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে। এখনো চুয়েটে উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাঙামাটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংস্কারের দাবি উঠছে সর্বমহলে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা চান বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন করে ঢেলে সাজানো হোক। এ জন্য তঁারা বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় সেসব দাবি পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিকে সমর্থন করেন বিশেষ করে বিগত সরকারের সঙ্গে যুক্ত এমন কাউকে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য হিসেবে চান না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে দক্ষ ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান তাঁরা।
আমরা আশা করব, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে দ্রুত এ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য নিয়োগ করা হবে।