জনপ্রতিনিধি কি আইনের ঊর্ধ্বে

সম্পাদকীয়

আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে এবং পরিবেশের সাড়েসর্বনাশ করে ক্ষমতাচর্চা কীভাবে করা যায়, তার দৃষ্টান্ত হতে পারেন কুমিল্লার হাবিবুর রহমান। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তিনি।

্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ইটভাটায় সরবরাহ করার জন্য কাজিয়াতল গ্রাম থেকে তাঁর নেতৃত্বে একটি চক্র কৃষিজমির মাটি কাটছে। সেই মাটি ট্রাক্টরে করে নেওয়ার জন্য খিড়া নদীতে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ আটকে দেওয়া হয়েছে। খিড়া নদীটি উপজেলার দারোরা ও ধামঘর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। দুটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক সেচের জন্য এই পানির ওপর নির্ভরশীল। নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে—তাঁরা সেচের পানি পাবেন কি না।

একসময় খিড়া নদী দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী নৌকা চলাচল করত। নদীতে মিলত মাছ। কিন্তু দূষণ ও দখলে নদীটি এমনিতেই মৃতপ্রায়। বাঁধ দিয়ে ও মাটি ফেলে নদীটির কফিনে যেন শেষ পেরেক ঠোকার আয়োজন চলছে।

দেশের বেশির ভাগ ইটভাটা অবৈধ। এই ইটভাটার জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়া হয়। জমির উপরিভাগের ছয়–সাত ইঞ্চি মাটি বা টপ সয়েলে সব জৈবগুণ থাকে। ফলে এই মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলের উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে কমছে। ছোট্ট দেশে বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার কারণে এমনিতেই খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। সে কারণেই আইন করে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাবিবুর রহমান মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে কৃষিজমির ২৫–৩০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছেন।

১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এই আইনে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তনের মতো অপরাধ তো হাবিবুর রহমান করেছেনই; বাঁধ দিয়ে নদী হত্যার উদ্যোগও নিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে তিনি একা জড়িত নন। ইটের ভাটার মালিকদেরও ইন্ধন রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নদীর মাঝখানে বাঁধ দেওয়াকে ভয়াবহ ঘটনা উল্লেখ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মুরাদনগরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশা করি, হাবিবুর রহমান ও তাঁর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।