রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা চারটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। নগর-পরিকল্পনার এক চরম ব্যর্থতাই বলতে হয় একে। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থদের দুর্দশা আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। বনশ্রী ও আফতাবনগরে অর্ধশত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্তত ২০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। যেহেতু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল বনশ্রীতে অবস্থিত, তাই আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এই সাঁকোগুলো ব্যবহার করে এপারে আসতে হয়। কিন্তু এই নড়বড়ে সাঁকোতে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। ঝড়-বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। সাঁকো ভেঙে গেলে বাঁশের কাঠামোর ওপর কাঠের নৌকা সাজিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়, তখন প্রতিবার পাঁচ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।
ভাবা যায়, ঢাকার মতো একটি আধুনিক শহরের প্রাণকেন্দ্রে মানুষ এখনো বাঁশের সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল! আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দাকে বনশ্রী আসতে চাইলে রামপুরা সেতু ঘুরে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বনশ্রীর বাসিন্দাদের আফতাবনগরে যেতে হলে বাড্ডা ইউলুপ ঘুরে আসা মানে দূরত্ব দ্বিগুণ বৃদ্ধি। এই ভোগান্তি শুধু সময় নষ্ট করছে না, অর্থনৈতিক চাপও সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় লোকজন দেড় দশক ধরে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ কী? কেন নগর কর্তৃপক্ষ এত দিন এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অবহেলা করে আসছে?
তবে আশার কথা হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে গাড়ি ও মানুষের হাঁটার উপযুক্ত সেতু এবং একটি হবে পদচারী–সেতু। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা।
আমরা আশা করব, এবার আর শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সিটি করপোরেশন দ্রুততার সঙ্গে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন করবে। তবে সেতুগুলো নির্মাণের সময় খাল সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। সেতু করতে গিয়ে খাল সংকুচিত হয়ে না পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, সেটিই কাম্য।