অনেক পানি ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোলাপবাগ ময়দানে বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজ সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বিএনপির নেতারা সমাবেশ সফল করতে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তাঁদের এই চাওয়াটা অযৌক্তিক নয়। সমাবেশের জন্য স্থান ঠিক করাই যথেষ্ট নয়। সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।

বিএনপির ঢাকার সমাবেশ ঘিরে গত কয়েক দিনে অনেক অঘটন ঘটেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের একজন কর্মী মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন। বিএনপির অফিসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সেখানে যাঁকে পেয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে নিজ নিজে বাসা থেকে রাত তিনটায় গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে দিনের বেলায় গ্রেপ্তার করা যেত। তাঁরা কেউ পালিয়ে যাননি, বাসায়ই ছিলেন।

 আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যাওয়াটাই নিয়ম। থানা প্রয়োজন বোধ করলে আদালতে হাজির করাই নিয়ম। বিএনপির দুই নেতাকে আদালতে হাজির করার আগে প্রায় ১২ ঘণ্টা ডিবি অফিসে রাখা হলো। প্রথমে ডিবি থেকে বলা হয়, তাঁদের ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ের ঘটনা ও সমাবেশের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তঁাদের ৭ ডিসেম্বরের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো। সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার করে মামলা দেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না। আজ যেসব অভিযোগ দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, অতীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এই অপরাজনীতি বন্ধ হোক। সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার পেছনে সরকারের চণ্ডনীতি তো আছেই। নয়াপল্টনের সামনেই সমাবেশ করতে হবে, বিএনপির এই অনড় অবস্থানও ভুল ছিল বলে আমরা মনে করি। তারা বিকল্প মাঠের কথা আগে ভাবলে এসব অঘটন না–ও ঘটতে পারত। 

বিএনপিকে যখন সরকার গোলাপবাগে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে, তখন সেখানে যাতে তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমাবেশটি শেষ করতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও সরকারকে নিতে হবে। বিএনপির মহাসচিবসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে। দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় দলীয় কর্মীদের শান্ত ও সংযত রাখার দায়িত্ব নেতাদেরই। অতি উৎসাহী কর্মীদের কারণে যাতে শান্তি বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে নেতৃত্বকে সতর্ক থাকতে হবে।

 আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় পাহারা বসিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠে থাকবেন না বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, বাস্তবে তার প্রতিফলনই দেখতে চাইবে মানুষ। 

আমরা আশা করতে চাই, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিএনপির গণসমাবেশগুলো যেভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে, ঢাকার সমাবেশটিও একইভাবে শেষ হবে। মানুষ শান্তি চায়। কারোরই উচিত হবে না, সেই শান্তি বিঘ্নিত হয়, এমন কিছু করা।