প্রাণীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দেশে প্রচলিত আইন থাকলেও তা প্রয়োগের খুব একটা নজির নেই। দেশে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করে—এমন সংস্থা আর অধিকারকর্মীদের সংখ্যাও হাতে গোনা। এটিকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে পশুপাখির ওপর অকথ্য নিষ্ঠুরতা চালান অনেক ব্যক্তি। নির্মমভাবে প্রাণী হত্যা করতেও তাঁরা দ্বিধা করেন না।
বরগুনা সদর উপজেলার খাকবুনিয়া গ্রামে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে এ বছর শতাধিক কুকুর হত্যা করা হয়েছে। এ অপরাধের সঙ্গে ওই গ্রামের সংঘবদ্ধ একটি গোষ্ঠী জড়িত। পথকুকুর, পোষা কুকুর, গর্ভবতী কুকুরও তাদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। হত্যার শিকার একটি পোষা কুকুরের মালিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় এ খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, খাকবুনিয়া গ্রামে একটি পোষা কুকুরকে হত্যার অভিযোগে গত মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেছেন কুকুরের মালিক আনিসুর রহমান। মামলায় আসামি করা হয়েছে মো. রাকিব পঞ্চায়েত, মো. মাওলা পঞ্চায়েত ও মো. আবু পঞ্চায়েত। বিচারক মাহবুব আলম মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যাচ্ছে, আসামিরা গত রোববার ফাঁদ পেতে বাদী আনিসুর রহমানের একটি পোষা কুকুরকে পিটিয়ে ও টেঁটা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। কুকুরটির পাঁচটি দুগ্ধপোষ্য ছানা রয়েছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আসামিরা টেঁটা দেখিয়ে বাদীকে খুন-জখমের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাড়িয়ে দেন। চলতি বছর এ রূপ নিষ্ঠুর পন্থায় তাঁরা শতাধিক কুকুর হত্যা করেছেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
দেশে প্রাণী সুরক্ষায় প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯ এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ নামে দুটি আইন আছে। প্রাণিকল্যাণ আইনে মালিকবিহীন কোনো প্রাণী হত্যা করলে ৬ মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে কুকুরকে একটানা ২৪ ঘণ্টা বেঁধে বা আটকে রাখলে তা হবে নিষ্ঠুরতা। এই অপরাধের জন্য ৬ মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের মুখে পড়তে হবে।
আমাদের পৃথিবীতে একমাত্র প্রাণ মানুষ নয়। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বাস্তুসংস্থানের প্রতিটি প্রাণীই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রাণী হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরগুনার খাকবুনিয়া গ্রামে কুকুর হত্যার প্রতিকার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তিন আসামির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে কুকুর হত্যার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক।