এ দেশে কৃষকদের মতো অবহেলিত আর কে আছে। রাষ্ট্র ও সরকার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কত কিছু করে, সেগুলো কতটাই–বা কৃষির কল্যাণ হয়, কৃষকের উপকার হয়। সেচকাজ ছাড়া কৃষি উৎপাদন অসম্ভব। সেচের জন্য দেশজুড়ে অনেক জলকপাট তৈরি করা হলেও অনেকগুলো পুরোনো ও অকেজো হয়ে গেছে। আবার খালের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া বা খাল খনন না করায় কাজেও আসছে না কোনো জলকপাট। যেমনটি দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর একটি গ্রামে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জাউনিয়া গ্রামে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। পাশেই বয়ে গেছে একটি খাল। সেই খালের ওপর ২০১৬ সালে দুই কোটির বেশি টাকা খরচ করে বানানো হয় একটি জলকপাট। অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেটি নির্মাণ করে। কিন্তু সেই জলকপাট কোনো কাজে আসছে না। কারণ, খালের গতিপথ বদলে গেছে, আবার সেই খাল খননও করা হয়নি। এখন সেচকাজে কৃষকের অর্থ ও সময় দুটিই ব্যয় হচ্ছে বেশি। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় বিপুল ব্যয়ে নির্মিত এ জলকপাট নষ্ট হতে বসেছে। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ লৌহজাত সামগ্রী। নির্জন জলকপাটে এখন নিয়মিত অসামাজিক কার্যকলাপ চলে।
সরকারি সম্পদ নষ্ট না করে কৃষকদের জন্য উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়েছে ছোট সিংগিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। জলকপাটটি সচল করতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নিয়মিত এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। সংগঠনটির নেতাদের ভাষ্য, পানি স্লুইসগেটের দিকে ফিরিয়ে আনতে খালের পাড় ব্লক দিয়ে বেঁধে দিলে তাঁরা সুফল পাবেন। এটা না করলে জলকপাটটি তাঁদের কোনো কাজে আসবে না।
উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামের বক্তব্য, আকস্মিক বন্যায় পলি এসে জলকপাট দিয়ে খালের পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে ফেলেছে। ফলে খালের পানি অন্যদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। খালটি খনন করার পর যন্ত্রপাতি আবার লাগালেই সেটি সচল হবে। এলজিইডির ঠাকুরগাঁও কার্যালয় বলছে, জলকপাটটি সচল করতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই তারা কাজ শুরু করবে।
আমরা আশা করব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জলকপাটটি সচল করার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে। শুধু বালিয়াডাঙ্গীর এই জলকপাটই নয়, দেশের বাকি সব জলকপাট নিয়ে মাঠপর্যায়ে জরিপ চালানো হোক। বড় বা জটিল কোনো ত্রুটি ছাড়া বন্ধ হয়ে আছে, এমন জলকপাটও আছে। কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে জলকপাটগুলো সচল রাখতে হবে ও নিয়মিত তদারক করতে হবে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা ও তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে, সেটিই কাম্য।