গোটা দেশে এ উদাহরণ ছড়িয়ে পড়ুক

শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমলেও নিরাপদ মাতৃত্ব, নিরাপদ সন্তান প্রসব এখনো বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। সরকারের তরফ থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসবে উৎসাহ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত জনবল ও নানা সুযোগ–সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এর কিছু সুফল আমরা দেখতে পাচ্ছি।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবসেবায় হয়ে উঠেছে অনন্য এক হাসপাতাল। এখানে সেবা নেওয়া প্রসূতিদের চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, ওষুধপথ্য কোনো কিছুর অভাব হয় না। সন্তান প্রসবের জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। উল্টো হাসপাতাল ছাড়ার আগে বিনা মূল্যে মাসখানেকের ওষুধ দিয়ে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবে সুস্থ সন্তান প্রসব করাতে এখানকার মিডওয়াইফদের মধ্যেও একধরনের প্রতিযোগিতা চলে। কারণ, যিনি যত বেশি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করাতে পারবেন, তাঁর জন্যও রয়েছে পুরস্কার। মাস শেষে একজন মিডওয়াইফকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য মান্থ’ খেতাব দেওয়া হয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে যে বছর তিনেক আগেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বছরে ২৫০ থেকে ২৬০টি স্বাভাবিক প্রসব হতো। বর্তমানে হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। ২০২০ সালে এই হাসপাতালে ২৬৩টি স্বাভাবিক প্রসবের বিপরীতে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬১৪টি, যা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের ক্ষেত্রে নওগাঁ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। গত জানুয়ারিতে ৯৬টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।

হাসপাতালের এ পরিবর্তনের নেপথ্য কারিগর উপজেলাটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। ২০১৮ সালে হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তখন হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যেই আর সব রোগীর পাশে হতো প্রসবপ্রক্রিয়া। ছিল না গোপনীয়তা বা পরিচ্ছন্নতার পরিবেশ। তখন মাসে ১০ থেকে ১২টি শিশুর স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম হতো। প্রসূতি চিকিৎসার এই দুরবস্থা দূর করার উদ্যোগ নেন রুহুল আমিন। হাসপাতালে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরি করেন, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পৃথক ডেলিভারি রুম এবং প্রসবের জন্য চিকিৎসক ও মিডওয়াইফদের সমন্বয়ে গঠন করেন আলাদা ইউনিট।

স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে হাসপাতালটিকে আস্থার জায়গা হিসেবে তৈরি করতে নানা রকম অনুপ্রেরণামূলক উদ্যোগও নেন রুহুল আমিন। যেখানে আছে প্রসূতিদের বিনা মূল্যে ওষুধ প্রদান ও মিডওয়াইফদের পুরস্কৃত করা। এতে বোঝা যায় যে তিনি শুধু দায়িত্বশীল কর্মকর্তাই নন, সফলতা অর্জনে সৃজনশীলও।

স্বাভাবিক প্রসবকে প্রসূতি ও নবজাতক উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য বড় সুরক্ষা হিসেবে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে সাপাহারে একজন রুহুল আমিন যে সফলতা দেখিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।