দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে নিঃসন্দেহে গর্ব করতে পারে সরকার। পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, উপকৃত হচ্ছে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত ও কর্মহীন মানুষও। কিন্তু এসব কর্মসূচি আদতে ঠিকঠাকমতো চলছে কি না, সেটিও দেখার বিষয়। যেমন শরীয়তপুর ও কুড়িগ্রামে কোনো ধরনের কাজ না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে এসব কর্মসূচির টাকা। এমন গুরুতর অনিয়মে ওই সব এলাকায় উন্নয়ন তো হলোই না, বঞ্চিত হলো সুবিধাভোগী মানুষও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের অনুকূলে ৯১টি প্রকল্পের বিপরীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোয় কোনো কাজ হয়নি, অনেকগুলোয় হয়েছে আংশিক। অথচ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। এখন এ বিষয়ে নাহিম রাজ্জাকের বক্তব্য, ‘আমি শুধু প্রকল্পের তালিকা দিই। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন তদারক করি না। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট লোকজন তদারকের দায়িত্বে থাকেন। তবে কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একই অর্থবছরে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উলিকুড়ি উপজেলায় আড়াই শর বেশি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ও ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি চাল-গম বরাদ্দ করা হয়। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পগুলো শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোথাও নামমাত্র কাজ হয়েছে, কোথাও কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্প শুধু কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

উভয় এলাকাতেই দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে অর্থ ও চাল-গম দেওয়ার কথা থাকলেও এর কিছুই মানা হয়নি। স্পষ্টই বলা যায়, এখানে রীতিমতো লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে এবং তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারও অজানা নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরাই এর সঙ্গে জড়িত। এভাবে কি প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য টিআর, কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচি ব্যর্থ হতে থাকবে? এর জন্য কেউ জবাবদিহি করবে না? আমরা চাই, তদন্ত করে এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।