অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার বক্তব্য তাঁকে সত্যিকার অর্থেই অগ্নিপরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে। ফলে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও এ নিয়ে সব ধরনের আশঙ্কা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া এখন তাঁর দায়িত্ব। নির্বাচনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কমিশন এ কাজটি করতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে সরকার বা সরকারি দলের যেকোনো অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের সক্ষমতা তাদের রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কতটা শক্ত অবস্থান নেবে, তার প্রতি দেশবাসী সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।

সংবিধান অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও অনেকে মনে করেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে রকম আভাস দিয়েছেন। যখনই হোক না কেন, দেশবাসী আশা করে, আগামী নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। এমন একটি নির্বাচনের জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছেন, আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক, তা তাঁরা চান না।

এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা কোনো রাজনৈতিক দলের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবারই মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করার অধিকার আছে। ক্ষমতাসীন দল জনমত তৈরি করতে যদি সভা-সমাবেশ করতে পারে, তাহলে বিরোধী দলকেও সেই সুযোগ দিতে হবে। গণতন্ত্রের যে ন্যূনতম শর্ত প্রতিটি দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার, সেটি বাস্তবায়ন করতে এখনই ইসিকে সক্রিয় হতে হবে, এ ব্যাপারে সরকারকে চাপ দিতে হবে।

সংবিধানের ৭ ধারা অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। দেশ পরিচালনার বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। আর আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ পরিচালিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। ফলে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে তাতে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায় না। ফলে জাতি, ধর্ম ও দলমত-নির্বিশেষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে কখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিরোধী দলের প্রধান উদ্বেগের বিষয়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনেরা সহজেই সেটি প্রভাবিত করে থাকেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের তরফেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এই নিশ্চয়তা থাকতে হবে যে নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে এবং নির্বাচনকালীন সরকার দৈনন্দিন রুটিন কাজের বাইরে কিছু করবে না।

দেশবাসী ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চায় না। তারা চায় একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সেটি যে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়, সেটাই সিইসির কথায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। আবার বিএনপির নেতৃত্বকেও বুঝতে হবে, নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে—এমন অবস্থানই এখন পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশনও তফসিল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সিইসির প্রতিশ্রুত নির্বাচনের ‘ভালো পরিবেশ ও সবার জন্য সমান সুযোগ’ সৃষ্টির কাজ এখনই শুরু করে দেবে।