করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯–এর রোগীদের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। যেসব রোগীর শ্বাসকষ্ট সহনীয় মাত্রায় থাকে, তাঁদের শ্বাস গ্রহণের জন্য অক্সিজেন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যাঁদের শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়, তঁাদের শ্বাসযন্ত্র সচল রাখতে বাইরে থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। এটি কেবল করোনায় আক্রান্ত রোগী নন, আরও অনেক গুরুতর রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ জরুরি হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত তিন হাজারের বেশি রোগীর আইসিইউ সহায়তা দরকার, কিন্তু শয্যা আছে মাত্র ৩৯৯টি। আছে অক্সিজেন সরঞ্জামেরও অভাব।
সরকারের দাবি, হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। তাদের এই দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল কম। গতকাল ডেইলি স্টার–এর প্রধান খবর ছিল অক্সিজেন–সংকট নিয়ে। শিরোনামটির বাংলা করলে দাঁড়ায়, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট: চাহিদা আকাশচুম্বী, দামও। অন্য একটি বাংলা পত্রিকার শিরোনাম ছিল, ‘চট্টগ্রামে অক্সিজেনের দুর্ভিক্ষ’।
করোনাসংকট শুরু হওয়ার আগে হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ অক্সিজেন লাগত, বর্তমানে তার চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, সেই চাহিদা পূরণের সামর্থ্য, অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে কি না। যেসব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা আছে, সেসব হাসপাতালে সমস্যা কম। কিন্তু আমাদের সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ হাসপাতালে তো কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগই নেই। ফলে সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, কিছুদিন আগেও ১ হাজার ৪০০ লিটারের যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হতো সাড়ে ২৬ হাজার টাকায়, এখন সেটি ৪৭ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ডেইলি স্টার–এর খবর অনুযায়ী ঢাকার বাইরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রচণ্ড সংকট। অনেকে ঢাকায় সিলিন্ডার কিনতে এসে বেশি দাম দেখে ফিরে যাচ্ছেন। সিলিন্ডার–সংকটের একটি কারণ হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়া। আরেকটি কারণ, এক শ্রেণির ধনবান ব্যক্তি এটিও কিনে বাড়িতে মজুত রাখছেন। এটি খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। কারও টাকা থাকলেই এভাবে জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে জনগণের মধ্যে যেমন সচেতনতা দরকার, তেমনি সরকারের তরফে প্রচার-প্রচারণারও প্রয়োজন রয়েছে।
তিন উপায়ে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন দেওয়া হয়—সিলিন্ডার, হাই ফ্লো ও রোগীর শ্বাসযন্ত্রে কৃত্রিম যন্ত্র দিয়ে। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান ছাড়া ব্যবহারের সুযোগ নেই। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রার পরিমাণ নিরূপণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বিপদ দেখা দিতে পারে।
সরকার দাবি করছে, হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কিসের ভিত্তিতে এই দাবি করা হচ্ছে? সামনে সংক্রমণের সম্ভাব্য সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে কি আদৌ কোনো হিসাব-নিকাশ করা হয়েছে? সংকট না থাকলে দাম বাড়ছে কেন? আর হাসপাতালে অক্সিজেন থাকলেই হবে না, সেটি ব্যবহারের সব সরঞ্জাম অর্থাৎ ট্রলি, মাস্ক, ভেন্টিলেটর ইত্যাদিও নিশ্চিত করা জরুরি।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নেই। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহ না বাড়ালে এবং সামনে সংক্রমণ আরও বাড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। ফলে আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চট্টগ্রামে বেশি দামে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির দায়ে এক ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এ ধরনের অভিযান জোরদার করতে হবে এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনাবেচার বিষয়টি তদারক করতে হবে, যাতে লোকজন এগুলো কিনে বাড়িতে মজুত করতে না পারে।