কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারও নির্বিঘ্ন চালিয়েছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেসব বিষয়েও বড় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কমিশন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুরসংখ্যক সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসায়। এমনকি যে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক ও সন্দেহ আছে, সেই ইভিএম ব্যবহারেও নির্বাচন কমিশন বেশ সতর্ক ছিল। যদিও কোথাও কোথাও বয়স্ক ভোটাররা অসুবিধায় পড়েছেন।
কথায় বলে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ‘শেষ ভালোটা’ দেখাতে পারল এ কথা বলা যাবে না। বুধবার বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরই কেন্দ্রগুলোয় ভোট গণনা চলতে থাকে। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের মধ্যে। আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে মনিরুল হক প্রায় ছয় শ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এরপরই যে কন্ট্রোল রুম থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করছিলেন, সেখানে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন থেকে বাকি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হলে হট্টগোল চরম বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক ঘোষণা দেন, ফল না নিয়ে স্থান ত্যাগ করবেন না। এর কিছুক্ষণ পর রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করে জানান, ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম মনিরুল হক পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান মাত্র ৩৪৩।
যেভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, তাতে দুই প্রার্থীর যেকোনো একজনের জয়ী হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে হট্টগোল না হলে কিংবা গণনা স্থগিত না করা হলে জয়-পরাজয় নিয়ে বিতর্কের সুযোগ থাকত না। এটি নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতা, পেশাদারির অভাব না অন্য কোনো রহস্য আছে, সেই প্রশ্ন উঠবেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে এবং তিনি নির্বাচনী আদালতে প্রতিকার চাইবেন।
এর আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে যে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল, তা তিনি অমান্যই করেননি, নির্বাচন কমিশনের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং ভাষার শিষ্টাচার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ভোটের দিন তাঁর এই চ্যালেঞ্জে ভোটারদের মনে কোনো প্রভাব ফেলেছে কি না, সেই বিতর্কের চেয়ে যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, কমিশন তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অপরাগ।
নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আছে, সুষ্ঠু ভোট হওয়া সত্ত্বেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। অনেক প্রশ্নের জবাব অজানাই থেকে গেল।