২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও সবুজ রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই অঙ্গীকার রীতিমতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এখন ঢাকা শহরে সবুজ ও পরিচ্ছন্নতা দুটোই দুর্লভ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সড়ক, দেয়াল, পদচারী–সেতু, সড়কের মোড়ে মোড়ে যেভাবে উদ্ভট ও উৎকট অসংখ্য পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগিয়ে কিম্ভূতকিমাকার চেহারা বানানো হয়েছে, তাতে বিশ্বাস করা কঠিন যে এটি একটি রাজধানী শহর।
একটি আধুনিক শহরে সবকিছুই চলে নিয়মমাফিক। কিন্তু দেড় কোটি জন–অধ্যুষিত এই ঢাকা শহরে কোথাও কোনো নিয়ম আছে বলে মনে হয় না। নির্বাচন সামনে রেখে একশ্রেণির রাজনীতিক পোস্টার-ফেস্টুন টানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, যা অপরিচ্ছন্ন শহরকে আরও অসুন্দর করেছে। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে এসব পোস্টার–ফেস্টুন প্রদর্শনকারীর ৯৯ শতাংশ ক্ষমতাসীন দলের পাতিনেতা। মহানগরীকে পোস্টার, ফেস্টুনমুক্ত রাখতে যে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলইডি বিলবোর্ডের ব্যবস্থা চালু করেছিল, সেটিও তেমন কাজে লাগেনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন আক্ষেপ করে বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের কারণে তিনি পোস্টার-ফেস্টুন সরাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর এই উক্তি আমাদের বিস্মিত করেছে এ কারণে যে ঢাকা শহরে অবৈধ পোস্টার-ফেস্টুন বন্ধ করা কারও ইচ্ছে–অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এসব নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালে যে আইন পাস করা হয়েছে, সেটি প্রয়োগ করলেই অবৈধ পোস্টার ফেস্টুন টানানো বন্ধ হয়ে যাবে। ওই আইনে সিটি করপোরেশনের অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগালে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা ১৫ দিন থেকে ১ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল ‘ক্লিন ঢাকা, গ্রিন ঢাকা’। সে সময়ে তিনি ছয়টি নামকরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা ভেঙেও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর শহরজুড়ে পোস্টার–ফেস্টুনের মহোৎসব শুরু হয়েছে।
২০১৬ সালে নির্বাচন কমিশনের নতুন ভবন উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রী-কর্মীদের ছবিসংবলিত পোস্টার-ফেস্টুন টানানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ছবির সংস্কৃতি একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কঠোর হওয়া উচিত। ছবি লাগানোই যাবে না—এমন ব্যবস্থা করা দরকার।’ কিন্তু নির্বাচন কমিশন বা সিটি করপোরেশন যে কঠোর হয়নি, যত্রতত্র মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পোস্টারের দৌরাত্ম্যই তার প্রমাণ।
এসব ব্যানার-ফেস্টুন কেবল নগরীর সৌন্দর্যই নষ্ট করে না, অনেক সময় যান চলাচলেও সমস্যা তৈরি করছে। আর এ কথা ভাবারও কারণ নেই, নেতা-কর্মীরা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে এসব পোস্টার–ফেস্টুন লাগান। পোস্টার-ফেস্টুনের আকার যত বড় হয়, পাড়ায় পাড়ায় চাঁদার পরিমাণও তত বাড়ে।
অবিলম্বে রাজধানীর সব অবৈধ পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ড অপসারণ করা হোক।