অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে থামান

সম্পাদকীয়

নতুন নতুন শিল্পকারখানা হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে—এটিই এখনকার বাংলাদেশের বাস্তবতা। তাই বলে কৃষিজমি নষ্ট করে সেই শিল্পকারখানার অবকাঠামো নির্মাণে মাটির জোগান দেওয়া হবে, তা তো মানা যায় না। আর সেই কাজই করছেন কিনা এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান। কৃষকদের ক্ষতি করে হাওরের কৃষিজমির মাটি কেটে মুফতে টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন তিনি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটছে। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকেরা ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শিল্পকারখানা নির্মাণকাজে মাটির জোগান দিতে হাওরের কৃষিজমিকেই বেছে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ওরফে মামুন। এ কাজের ঠিকাদারি নেন তিনি। ড্রেজার মেশিন বসানোর জন্য জমিতে খালও খুঁড়ে ফেলেছেন। এভাবে মাটি তোলায় এলাকার হাওরের জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এ খননকাজ শুরু করা হয়। মাল্লা ও ধনকুড়া গ্রামে কাষ্টি নদের পাশেই মাল্লা-ধনকুড়া বন্দ হাওরের প্রায় ১০০ একর জমি নিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এ বাঁধের চারপাশ ঘিরে খনন করা হয়েছে বিশাল খাল। পাইপের সাহায্যে ওই স্থান থেকে ১০–১২ কিলোমিটার দূরে নোয়াপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরল মাটি।

স্থানীয় দুই গ্রামের মানুষ কৃষির ওপরই নির্ভরশীল। এ হাওরে ইউপি চেয়ারম্যানের তেমন কৃষিজমি নেই। যদিও সামসুল ইসলাম ওরফে মামুনের দাবি, তিনি নিজের জমিতে পুকুর খনন করে মাটি উত্তোলন করছেন। এ মাটি তোলায় হাওরের কৃষিজমির কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু দেখা গেছে, কৃষিজমিতেই তিনি এ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, ধানের চেয়ে মাটি ব্যবসায় আয় বেশি বলে কয়েকজন সাধারণ কৃষককে তিনি নিজের দলে ভিড়িয়েছেন, কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে অন্য কৃষকদের। এ ছাড়া মাটি তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ড্রেজার মেশিন। অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মেশিন দ্রুত জব্দ করা হোক।

ইউপি চেয়ারম্যানের এ মাটি–বাণিজ্যের কারণে প্রায় ২০০ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি ফাটলও দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকার কৃষকেরা গত সোমবার মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি যাচাই বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। হাওরের কৃষিজমি রক্ষা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কী ধরনের পদক্ষেপ নেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।