আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৪ অব্দের এই তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ। ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর এই দিনেই তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচারের পর তিনি আবার একই তিথিতে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর কাছে দিনটি এক পরম পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচিত।
বুদ্ধের জীবন-দর্শন হচ্ছে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানবতার কল্যাণে নিজেকে সমর্পিত করা। বুদ্ধের দর্শন তাই শুধু বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধধর্মের পঞ্চনীতিতে কোনো প্রাণী বধ না করা, চৌর্যবৃত্তি না করা, কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা না বলা, অবৈধ কামাচার না করা ও নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করার কথা বলা হয়েছে। নীতি–নৈতিকতার অবক্ষয়ে আজ পৃথিবীর যে অবস্থা হয়েছে, সেখানে এ নীতিগুলোর চর্চা মানবজাতির মুক্তির পথে সহায়ক হতে পারে। ব্যক্তিমানুষের জীবনে গৌতম বুদ্ধের জীবন-দর্শন চর্চা তাই বর্তমান বিশ্বে খুবই প্রাসঙ্গিক।
একদিকে সভ্যতার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতি হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্বের সর্বত্রই ঘটছে হিংসা আর হানাহানির বিস্তার। মানুষ আজ পরস্পরের ক্ষতি করছে; লাঞ্ছনা করছে, অন্যের জীবননাশ ও সর্বনাশ করার জন্য সদা তৎপর রয়েছে। সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও সৌভ্রাতৃত্ববোধের অভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ বাস্তবতায় বুদ্ধের সেই মহান বাণী স্মরণ করা প্রয়োজন। অহিংসবাদের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, বৈরিতা দিয়ে বৈরিতা, হিংসা দিয়ে হিংসা কখনো প্রশমিত হয় না। অহিংসা দিয়ে হিংসাকে, অবৈরিতা দিয়ে বৈরিতাকে প্রশমিত করতে হবে। বিশ্বমৈত্রী ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ গঠনে বুদ্ধের এই বাণীকে বিবেচনায় নিলে হিংসা ও হানাহানি থেকে বিশ্বকে মুক্ত করা সম্ভব। বুদ্ধপূর্ণিমার এই দিনে বিশ্ববাসীর মনে অহিংসা ও প্রীতিবোধের উদ্বোধন হোক, সেটাই প্রত্যাশা।
বুদ্ধপূর্ণিমার এই দিনে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী বিশ্বের সব জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।