আইপিএল নিয়ে জুয়া

দ্রৌপদীকে বাজি রেখে শকুনির সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলা ছিল মহাভারতের কাহিনি। সেই দ্বাপর যুগ অস্ত গেছে। কিন্তু এই কলিযুগের একুশ শতকেও সেই ধরনের সর্বস্ব বাজি ধরার ‘পাশা খেলা’ থামেনি। জুয়ার আসর বসছে নতুন নতুন নামে, নতুন নতুন চেহারায়। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বদৌলতে গোটা ভারতবর্ষে এখন চলছে ‘বেটিং’, সোজা বাংলায় জুয়া। তার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। আইপিএলের বাজিতে বছর কয়েক আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে এক জুয়াড়ি যুধিষ্ঠিরের কায়দায় নিজের স্ত্রীকে বাজিতে ধরে হেরে খবরে এসেছিলেন। বাংলাদেশে আইপিএলের জুয়ায় এখন পর্যন্ত কেউ বউকে বাজিতে ধরেছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু আইপিএলের জুয়ায় সব খুইয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে চেষ্টা করার ঘটনা দিন কয়েক আগে ঘটে গেছে খুলনার পাইকগাছায়। দেশ যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বহুদূর এগিয়ে গেছে, তার প্রমাণ আইপিএল চলছে ভারতে, আর এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চক কাওয়ালী গ্রামে।

আইপিএল খেলা নিয়ে অনেক রকম জুয়া হয়। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জুয়া চলে ম্যাচের ফলাফল নিয়ে। শুধু জেতা-হারার বাজি নয়, কোন উইকেটে কত রান উঠবে, ২০ ওভারে কোন দল কত রান করবে, প্রথম ৬ ওভার, ১০ ওভার ও ১৫ ওভারে কত রান উঠবে—সবকিছু নিয়ে বাজি ধরা চলে। এ ছাড়া কোন বোলার কত উইকেট পাবেন, কোন ব্যাটসম্যান কত রান করবেন, শেষ ওভারে কত রান হবে, এমনকি কোন বলে কত রান হবে—এসব নিয়েও বাজি ধরা হয়।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ বাজি চলছে। তবে পাইকগাছায় যা চলছে বলে খবর বেরিয়েছে, তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যাচ্ছে। সেখানে এ বাজির ‘সংক্রমণ’ মারাত্মক আকার নিয়েছে। বাজিতে হেরে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। অনেক সংসারে অশান্তি তৈরি হচ্ছে। করোনার সময় বেকার যুবক আর মূলত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলচালকেরা এতে বেশি জড়িয়ে পড়ছেন।

লক্ষ রাখা দরকার, এটি শুধু পাইকগাছায় আটকে থাকা সমস্যা নয়। এ সমস্যা বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাধি থেকে সমাজকে নিরাময় করতে যুগপৎভাবে প্রশাসন ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের ভূমিকা রাখতে হবে। সচেতনতা, শাসন ও সাজা—তিনটি বিষয়ের ওপরই গুরুত্ব না দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে চলে যাবে।