আক্রমণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুন

ঢাকা ও রংপুরে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুজন বিদেশি নাগরিক দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে। তা নিরসনের লক্ষ্যে সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তবে তাতে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি দূর হয়নি। সেটা প্রমাণিত হলো বুধবার সকালে দিনাজপুরে চিকিৎসক ও ধর্মযাজক একজন ইতালীয় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায়।
স্বস্তির বিষয়, পিয়েরো পিচম নামের ৫২ বছর বয়সী ওই ভদ্রলোক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু সকাল সোয়া আটটায় প্রকাশ্য রাস্তায় অনেক মানুষের চোখের সামনে তাঁকে গুলি করা এবং তারপর দুর্বৃত্তদের নির্বিঘ্নে চলে যাওয়ার ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গেল। কারণ, দুর্বৃত্তরা ভাবতে পারছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডে বারবার প্রমাণিত হচ্ছে যে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে মানুষ খুন করা ও বিচার-শাস্তি এড়িয়ে চলা কঠিন কিছু নয়।

এই পরিস্থিতি কীভাবে সৃষ্টি হলো, তা একটা গভীর প্রশ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বা বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করা হয়। কিন্তু এসব কোনো কাজের কথা নয়। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেসব পদক্ষেপের সুফল দৃশ্যমান করতে হবে। মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করা, অপরাধীদের সঠিকভাবে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের সুষ্ঠু ও দ্রুত প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আইন প্রয়োগে অদক্ষতা
ও শিথিলতা, বিলম্বিত বিচার-প্রক্রিয়া ও সামগ্রিকভাবে বিচারহীনতার আবহে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়।
পিয়েরো পিচমের আগে ঈশ্বরদীতে লুক সরকার নামে আরেক ধর্মযাজকের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। লুক সরকারের ক্ষেত্রে ইসলামপন্থী উগ্র গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার কথা পুলিশের সূত্রে বলা হয়েছে। পিয়েরো পিচমের ক্ষেত্রেও তা আছে কি না, সেটাও জানা দরকার। এই ঘটনাগুলো বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পিয়েরো পিচমের চিকিৎসা চলছে; আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। যারা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।