আখচাষিদের মুখে হাসি

সম্পাদকীয়

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেও যশোরের কৃষকেরা আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছেন। সেখানে কেবল আখের উৎপাদনই বাড়েনি, আখচাষিরা সেই আখ বাজারে বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন। যেখানে প্রতিবছর আখের দাম না পেয়ে আখচাষিদের আহাজারির খবর পড়তেই আমরা অভ্যস্ত, সেখানে আখের উৎপাদন ও দাম বাড়ার এ খবর উৎসাহব্যঞ্জকই বটে।

প্রথম আলোর যশোর অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় আখের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার এই জেলায় ১৩ হেক্টরের বেশি জমিতে আখের চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে যেখানে আখের চাষ হয়েছিল ৪০৭ হেক্টর জমিতে, সেখানে এবার হয়েছে ৪২০ হেক্টরে। জেলার আট উপজেলার মধ্যে সদরে ৩৭ হেক্টর, শার্শায় ৩৫, ঝিকরগাছায় ১০, চৌগাছায় ৮৫, অভয়নগরে ৮, মনিরামপুরে ৯৫, বাঘারপাড়ায় ১১০ ও কেশবপুরে ৪০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। যশোরে দুই ধরনের আখের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী আখের আবাদ হয়েছে ৩৩৫ হেক্টর জমিতে, যা মূলত হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হয়। আর চিনিকলে ব্যবহারের উপযোগী হাল ও মুড়ি জাতের আখের চাষ হয়েছে বাকি ৮৫ হেক্টরে। হাল ও মুড়ি আখের জাতের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরদী-৩১ থেকে ৩৮ পর্যন্ত।

উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাওয়ায় যশোরের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু অন্যান্য এলাকার আখচাষিদের মুখে হাসি নেই কেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বেশির ভাগ সময় তাঁরা আখ বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠিয়ে নিতে পারেন না। বিশেষ করে যেসব আখ চিনিকলের জন্য উৎপন্ন করা হয়, এসব আখচাষিকে চিনিকল কর্তৃপক্ষের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয়। অভিযোগ আছে, এসব চিনিকল কর্তৃপক্ষ সময়মতো আখ কেনে না। কিনলেও ন্যায্যমূল্য দেয় না। চিনি বিক্রি না হওয়ার অজুহাত দেখায় তারা।

চিনির দাম শুধু টাকার অঙ্কে হিসাব করা ঠিক নয়। যে আখ চিনির জোগান দেয়, সেই আখচাষিদের জীবন-জীবিকার কথাও ভাবতে হবে। তারা স্বল্প দামে সার ও সেচ-সুবিধা পেলে আখও কম দামে বিক্রি করতে পারবেন। আর কম দামে আখ বিক্রি করা হলে চিনির দামও কম পড়বে। দেশীয় আখচাষিদের জীবিকার পথ রুদ্ধ করে বিদেশ থেকে চিনি আমদানির বিলাসিতা বন্ধ হোক। সব কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হোক।