আবার বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম

আমদানিকারকদের দাবি মেনে সরকার ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। বুধবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে লিটারপ্রতি সাত টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এত দিন তাঁরা প্রতি লিটার সয়াবিন কিনেছিলেন ১৫৩ টাকায়, এখন কিনতে হবে ১৬০ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রেও দাম বেড়েছে একই হারে। আগে ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম ছিল ৭২৮ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ৭৬০ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সাতবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে; যা কেবল অস্বাভাবিক নয়, নজিরবিহীন ঘটনা। গত জানুয়ারিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১১৫ টাকা, অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকা।

গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) প্রতিনিধি ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাজারে এখন যে তেল মজুত আছে, তাতে তিন মাস চলার কথা। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে এখনই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হবে কেন? ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেখিয়েছেন, করোনায় তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্ষতি না পোষালে তাঁরা টিকে থাকতে পারবেন না।

যদি আমরা ধরেও নিই যে করোনায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; কিন্তু তাঁরা কী পরিমাণ লাভ করেছেন, তার পরিসংখ্যানটিও জানা দরকার। বাজারে যদি তিন মাসের ভোজ্যতেল মজুত থাকে; তাহলে ‘ভূতাপেক্ষ নীতিতে’ দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। বাজারে মজুত তেল শেষ হওয়ার পর নতুন আমদানি করা তেলের দাম বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে এখানে পরিশোধন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও পরিশোধন ব্যয় বাড়েনি।

করোনাকালে কেবল ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি; বেড়েছে চালসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামও। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আটা ১৩ দশমিক ৫, ময়দা ৩০, সয়াবিন ৪৯, পাম ৫২, চিনি ২৬, মসুর ডাল ২৯, রসুন ৪১ এবং পেঁয়াজ ৪২ শতাংশ। এখন ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে করোনার ‘ক্ষতি’ পুষিয়ে নিতে চাইছেন। কিন্তু ভোক্তাসাধারণ কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন? করোনায় তাঁদের অধিকাংশের আয়–রোজগার কমে গেছে। এর ওপর নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় অসহনীয় অবস্থায় পড়েছেন তাঁরা। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু করোনায় রোজগার কমে যাওয়া সীমিত আয়ের মানুষগুলোর সমস্যা দেখার কেউ নেই।

সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, ক্যাবের দাবি অনুযায়ী তিন মাসের মজুত শেষ হওয়ার আগে যাতে কোনোভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো না হয়। চলতি বছরে ইতিমধ্যে সাত দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই অঙ্গীকারনামা রাখতে হবে যে অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা আর দাম বাড়াবেন না। সেই সঙ্গে সরকারকে টিসিবির মাধ্যমে চাল-ডাল-তেল-চিনিসহ নিত্যপণ্য ন্যায্য দামে বিক্রি বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেমন লাগামহীন দাম বাড়াতে পারবেন না, তেমনি সীমিত আয়ের মানুষ খেয়ে–পরে বাঁচতে পারবেন।