আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য জমি দান

সম্পাদকীয়

একাত্তরে যে চেতনায় পঞ্চগড়ের আবদুল মালেক মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, এখনো সেই চেতনা ধারণ করে আছেন। মুক্তি বলতে তিনি দেশ ও মানুষ উভয়ের মুক্তি বুঝেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে। মুক্তি মানে সব মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। মুক্তি মানে সবার জন্য আহার, বাসস্থানের ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। নাম দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের আমলে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ করা হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হলো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের রণচণ্ডী গ্রামে দুস্থ ও ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য কোনো খাসজমি ছিল না।

এ অবস্থায় এগিয়ে এলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক। তিনি তাঁর মালিকানাধীন ১০ একর জমি থেকে এক একর সরকারকে দান করে দিয়েছেন, যাতে ৩২টি ভূমিহীন ও দুস্থ পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করা যায়। শৌচাগারসহ দুটি কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি পাকা ঘরে থাকছে রান্নাঘর ও বারান্দা। সুপেয় পানির জন্য থাকছে প্রতি দুটি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ। প্রতিটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪২টি ঘরের মধ্যে ৩২টি ঘরই নির্মিত হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেকের জমিতে। এ ছাড়া সেখানকার বাসিন্দাদের যাতায়াতে রাস্তার জন্য ১৫ শতক এবং মাটি ভরাট করার জন্য ১৫ শতক জমি দিয়েছেন তিনি। প্রথম আলোর ছবিতে দেখা যায়, আবদুল মালেক ভূমিহীনদের বাড়ির নির্মাণকাজও দেখাশোনা করছেন। তাঁর মহানুভবতাকে সম্মান জানাতে পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান ও তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম রেখেছেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক নগর গুচ্ছগ্রাম’।

দুর্ভাগ্যজনক যে একাত্তরে যাঁরা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের সবাই নীতি ও আদর্শে অবিচল থাকতে পারেননি। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক পেরেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা সব সময়ই মানুষের পাশে থাকেন। তাঁর এই মহানুভবতা ও পরোপকারিতা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেককে অভিনন্দন জানাই।