ইলিশ ধরায় জেল-জরিমানা

সরকার মা ইলিশ রক্ষায় ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ সময় সারা দেশে ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় ও মজুত বন্ধ থাকবে। সরকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইলিশ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের জন্য ১০ হাজার ৫৬৬ দশমিক ৮৪ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল দেওয়া হবে। ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবে। ৩০ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খবর আসছে, এই সময়ে ইলিশ ধরার কারণে বহু জেলেকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। জেলেরা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, মাছ ধরার মাধ্যমে দৈনিক যে আয় হয়, তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। ১৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে, অথচ অধিকাংশ জেলে এখনো প্রতিশ্রুত ২০ কেজি চাল পাননি। একটি জেলে পরিবারের পক্ষে ২০ কেজি চাল দিয়ে ২২ দিন চলা কঠিন। সেই চালটুকুও যদি তাঁরা না পান, তাহলে কীভাবে তাঁদের দিন চলবে? মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আগে কেন জেলেদের কাছে চাল পৌঁছানো হলো না? ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরার দায়ে যেসব জেলে জরিমানার শিকার হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বলেছেন, পেটের দায়ে তাঁরা মাছ ধরতে এসেছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত শুধু ভোলা জেলাতেই ৯৪ জন জেলেকে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৭২ জনকে আর্থিক জরিমানা করেছেন। সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, ফরিদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি প্রভৃতি জেলা থেকেও শাস্তি দেওয়ার খবর আসছে। আর শুধু জেল-জরিমানা নয়, জেলেদের মাছ ধরার জালও পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

কেউ আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি পাবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা কেন সময়মতো রক্ষা করা হলো না? কেন এক সপ্তাহ পার হলেও জেলেদের জন্য বরাদ্দ চাল তাঁদের কাছে পৌঁছানো গেল না? যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দায়িত্ব ছিল চাল সরবরাহের, তাদের জবাবদিহি কোথায়? নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ ধরা অপরাধ বটে, কিন্তু সে জন্য গরিব জেলেদের এক বছর কারাদণ্ড বেশি কঠোর শাস্তি। তা ছাড়া তঁাদের জাল পুড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করাও ঠিক নয়।

জেলেদের জন্য বরাদ্দ চাল অবিলম্বে তাঁদের দেওয়া হোক; মাছ ধরার সময় জাল পুড়িয়ে ফেলা বন্ধ করা হোক এবং এক বছরের কারাদণ্ডের বিধানটি পুনর্বিবেচনা করা হোক।