ইসি দায় এড়াতে পারে না

সম্পাদকীয়

পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপ যদি ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ হয়ে থাকে, তাহলে ২৪টি পৌরসভায় সদ্য ভোট গ্রহণের চিত্র দেখে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দাবি ছিল, ইভিএমে ভোট হলে ভোট কারচুপি ও অনিয়ম বন্ধ হবে। এবারে সব কটি পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার পরও অনিয়ম ও জবরদস্তি বন্ধ না হওয়ার কারণ, এই যন্ত্র যাঁরা পরিচালনা করেন, দায়িত্ব পালনে তাঁদের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতা। বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরোধী দলের প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের আধিপত্য বিস্তার ছিল আগের মতোই।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ১৮টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, ২টিতে বিএনপির এবং ৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। একজন প্রার্থী মারা যাওয়ার কারণে একটি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত আছে। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থীরা কতটি পৌরসভায় মেয়র পদে জয়ী বা পরাজিত হয়েছেন, তা দিয়ে নির্বাচনের চরিত্র নিরূপণ করা যাবে না। নির্বাচনের চরিত্র বুঝতে হলে ভোট গ্রহণের আগের ও ভোট গ্রহণের পর্বটি বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই পৌরসভা নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বিঘ্নে প্রচার করতে পারেননি। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেননি। তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কী করে?

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও জবরদস্তির কারণে নির্বাচনব্যবস্থাটিই ভেঙে পড়েছে। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়াকে নিরর্থক মনে করছেন। কেননা তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গেলেই যে ভোট দিতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। তা সত্ত্বেও ২৪ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়া ইতিবাচক ফল দিতে পারত, যদি নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দল ও প্রার্থীবিশেষের প্রতি পক্ষপাত না দেখাতেন।

প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা মাঠপর্যায়ে যে চিত্র দেখেছেন, তাতে বিশ্বাস করা কঠিন যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাকে কার্যত দলীয় কর্মীর ভূমিকায় নামতে দেখা গেছে। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান ঢাকার ধামরাই পৌরসভার একটি কেন্দ্রের অনিয়মের ছবি তুলতে গেলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রকৌশলী আজিজুল হক তাঁকে লাঞ্ছিত করেন এবং মুঠোফোন কেড়ে নেন। ওই কর্মকর্তা এতটাই দলকানা যে তিনি সাংবাদিকের হাত থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক কর্মীর হাতে তুলে দেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জানালে তিনি ‘কিছু মনে করবেন না’ বলে অধস্তনের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেন। কেবল ধামরাই নয়, অনেক পৌরসভায় নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও জবরদস্তির খবর পাওয়া গেছে।

আরও দুঃখজনক হলো, নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এসব অনিয়ম ও জবরদস্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না; বরং ধামরাইয়ের গুরুতর অপরাধকে যেভাবে ইসির সচিব লঘু করে দেখেছেন, তাতে বলা অত্যুক্তি হবে না, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অপকর্মের প্রতি তঁাদেরও প্রচ্ছন্ন সায় আছে।

এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়া যদি সুখবর হয়ে থাকে, তবে তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন আচরণে। নির্বাচন কমিশন এর দায় এড়াতে পারে না।