উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে নানামুখী ভোগান্তি ও মানসিক চাপের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। এর কারণ প্রায় প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীর তুলনায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা অনেক কম থাকে। তাই একটি আসন পাওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়।

এবারের প্রেক্ষাপট আরও জটিল এবং কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। করোনার কারণে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল গড় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। এই মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। তাই ফল প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য, যাতে কোনো রকম ভুলভ্রান্তি না হয় এবং সন্দেহ-অবিশ্বাসের সুযোগ না থাকে।

আগামী দিনগুলো কেমন যাবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। শীতকালে করোনার ধাক্কা কতটা আসবে, ওই সময়ের মধ্যে করোনার টিকা মিলবে কি না—এসব অনেকটাই অনুমাননির্ভর। কিন্তু এর মধ্যেও উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রক্রিয়াটা বলে দিলে অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হলেও সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যদের
ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। গত বছর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সাল থেকে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট ছাড়া সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে তিন গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসির ফল হচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তিও একইভাবে হবে কি না—এমন জল্পনাও রয়েছে। এর অবসান হওয়া দরকার। আর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিকল্প ভাবনা এখনই শুরু করতে হবে।

২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি, যাঁদের সবাই পাস করবেন। উচ্চশিক্ষায় এত আসন আছে কি না? মোট আসনের হয়তো বড় সংকট হবে না। কারণ, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যত আসন থাকে, তার সবই পূরণ হয় না। কিন্তু মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অভাব আছে। মোট ৪৬টি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। কিন্তু মানসম্মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০ থেকে ১২টি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মানেও ভিন্নতা আছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে উচ্চশিক্ষার মান কেমন, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব কলেজে স্নাতক (সম্মান) ও ডিগ্রি (পাস) মিলিয়ে আসন আছে সাড়ে আট লাখের কিছু বেশি।

একদিকে ফল পাওয়া নিয়ে অস্থিরতা, আরেক দিকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা—এ দুই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষা প্রশাসনের বাস্তবমুখী ভূমিকাই প্রত্যাশিত।

আর অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মনে রাখা উচিত, উচ্চশিক্ষা সর্বজনীন হতে পারে না। ওই স্তরে তারই যাওয়া উচিত যে কিনা ওই শিক্ষা ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারবে। আমরা কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু সেখানে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা। সেই সুযোগ আগেই চলে গেছে। আগামী ডিসেম্বরে এইচএসসির মূল্যায়নের ফল প্রকাশ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি শেষ করা সম্ভব। ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা এবং সঠিকভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার সিঁড়িতে তুলে দেওয়ার কাজটি এবার অন্য বছরের তুলনায় কঠিন। এ জন্য শেষভাগে তাড়াহুড়া না করে এখনই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রয়োজনীয় ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।