উচ্চশিক্ষায় ভর্তি

সম্পাদকীয়

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৭ অক্টোবর সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। এরপর ৭ নভেম্বর পার হয়ে গেল। এই এক মাসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি; বরং বহুমুখী আলোচনা, মত-ভিন্নমত এবং বাস্তবতা মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল গড় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে এবং তা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে হওয়ার কথা। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসেও উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রক্রিয়াটা চূড়ান্ত করতে না পারাটা অগ্রহণযোগ্য।

প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষা। সেই সময় আগেই চলে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম নেই বললেই চলে। তবু ভর্তির প্রক্রিয়া ঠিক করতে এ বিলম্ব অপ্রত্যাশিত। একদিকে মূল্যায়নের ফল কী, তা নিয়ে অস্থিরতা, আরেক দিকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা—এ দুই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম।

দেশে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি, সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় ৩৯টিতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়, চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট ছাড়া বাকিগুলোকে তিনটি গুচ্ছে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখন আলোচনা হচ্ছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্ব দিতে পারে বুয়েট, প্রস্তাবটি মন্দ নয়।

এ ছাড়া ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত এবং একই ধরনের অধ্যাদেশে চলে, সেহেতু এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গুচ্ছ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চারটি গুচ্ছে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরগুলোতে নেওয়া যেতে পারে। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে; এবারের পরিস্থিতিতে অনেক পরীক্ষার্থী কিন্তু আত্মীয়স্বজনের বাসা বা ছাত্রাবাসে থেকে পরীক্ষা দিতে পারবেন না।

মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে নানামুখী ভোগান্তি ও মানসিক চাপের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। অভিভাবকদের হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। একটি আসন পাওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এ বিষয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষাবিদসহ অনেকেই। ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি, যাঁদের সবাই পাস করবেন। এঁদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় যেতে চাইবেন। কিন্তু মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের অভাব আছে।

গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় একজন উপাচার্যের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যারে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন আর তা হচ্ছে না। তাহলে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার রূপরেখা দরকার।

কর্তৃপক্ষের কাছে মনে হতে পারে, কদিন দেরি করে সিদ্ধান্ত নিলে এমন কীই-বা সমস্যা? আসলে এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হওয়াটা খুবই জরুরি। কোথায়, কখন এবং কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির অনেক কিছুই। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে, কী কী বিষয়ে প্রস্তুতি নেবে—এসব নিয়ে আগাম ভাবনার বিষয় রয়েছে। তাই পরীক্ষার্থীকে শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ার মধ্যে না ফেলে এখনই পরীক্ষার পদ্ধতি জানিয়ে দেওয়া হোক।