উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড বাড়ুক

সম্পাদকীয়

এই একুশ শতকে পৃথিবীর যে জনপদে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি, সেখানকার মানুষের ভাগ্য যে ভালো নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষ জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। বিদ্যুতের অভাবে একটি জনপদ যুগের পর যুগ অনুন্নত থেকে যায়।

সেই দুর্ভাগ্যের অবসান ঘটতে চলেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার একটি দুর্গম চরের মানুষের। চারদিক থেকে পদ্মা নদী দিয়ে ঘেরা ৮০ বছরের পুরোনো চরটির নাম কাঁচিকাটা। দেশের মূল ভূখণ্ড কিংবা আশপাশের অন্যান্য জনপদ থেকে সেই চরে যাওয়ার একমাত্র পথ নৌপথ। সেই চরের বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডে আসা-যাওয়া করতে হলে পদ্মা নদীর অন্তত ১৫ কিলোমিটার পথ নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চরটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিয়ন; বাসিন্দার সংখ্যা ২৬ হাজারের কিছু বেশি; পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজার ৭০০। তাঁরা প্রধানত কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী। গতকাল মঙ্গলবার চরটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে, ঘরে ঘরে আলো জ্বলেছে; আনন্দে ভরে উঠেছে এতকাল অন্ধকারে ডুবে থাকা মানুষগুলোর মন।

চরটিতে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হয়েছে একটু ব্যয়বহুল পন্থায়: পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্‌ল ব্যবহার করে। প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৮টি পরিবারকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্য পরিবারগুলোও সংযোগ পাবে। সন্দেহ নেই, বিদ্যুৎ ওই চরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। শুধু আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করা নয়; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায়ও বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চরটির উর্বর মাটিতে যে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হবে। ওই চরের একটা বড় অংশের জীবিকা পদ্মায় ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরা; সেসব মাছ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বরফ তাঁরা নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। বিদ্যুতের সংযোগ আসার প্রস্তুতির খবর পেয়ে ইতিমধ্যে কেউ কেউ বরফকল বসানোর উদ্যোগও নিয়েছেন। বিদ্যুতের সুবিধা সেখানকার মাছ ও কৃষিপণ্যকে পচন থেকে রক্ষা করবে।

বিদ্যুতের আলো-বাতাস কঁাচিকাটা চরের মানুষদের জীবনযাপনে আরাম ও স্বস্তি আনবে—এই আনন্দদায়ক বিষয়ের পাশাপাশি ভাবা দরকার, বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে কীভাবে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড বাড়ানো যায়। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আয় বৃদ্ধি প্রয়োজন। বিদ্যুৎ কঁাচিকাটার মানুষের সামনে সেই সম্ভাবনা ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন সেটা কাজে লাগানোর নানা সৃজনশীল পন্থা খুঁজে পেতে হবে।