এ পি জে আবদুল কালাম

‘আমার মৃত্যুতে ছুটি ঘোষণা করো না, আমায় যদি ভালোবাসো, মন দিয়ে কাজ করো সেদিন।’ সদা কর্ম ও জ্ঞান সাধনায় নিবেদিত এ পি জে আবদুল কালাম মৃত্যুর বহু বছর আগে তরুণদের এক সমাবেশে এ রকমই উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ছিলেন। সফল ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা হিসেবে তাঁর নামের আগে যুক্ত হয়েছিল ‘মিসাইল আবদুল কালাম’। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষার অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী কাজ করে গেছেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে আর পাঁচজনের মতো অবসরে না গিয়ে তিনি জ্ঞানালোকে নবীন প্রজন্মকে দীক্ষিত করতে ঘুরেছেন ভারতের বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে। এসেছেন বাংলাদেশেও। তাঁর লেখা বইগুলোতেও আছে স্বপ্ন ও জীবনকে জয়ী করার কথা।
উচ্চ চিন্তা ও সাদামাটা জীবনাচরণে অভ্যস্ত আবদুল কালাম বিশ্বাস করতেন মানুষের অমিত শক্তিতে। নিজে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও অধ্যবসায়ের জোরে হতে পেরেছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। তিনি কোন পদ বা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন কিংবা কত বড় রাষ্ট্রীয়, সেটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং তাঁর স্পর্শেই সেই পদ, প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার হয়ে উঠেছিল অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালে নিজের কর্মগুণে সব দলের সমর্থন আদায় করে নিয়েছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম। যে বিজেপি তাঁকে রাষ্ট্রপতি করেছিল, সেই বিজেপির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যেতেও দ্বিধা করেননি। বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের সরকারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন-সংক্রান্ত বিল তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
আবদুল কালামের সঙ্গে বাংলাদেশেরও নিগূঢ় সম্পর্ক ছিল। বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষক তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন। তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছেন। আমরা ভারতের এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে শোক জানাই। তাঁর শিক্ষা, গবেষণা ও লেখনী প্রজন্মান্তরে অনুপ্রেরণা জোগাবে।