এক জোড়া টিয়াছানা

আপনার ঘরের পাশেই যে নারকেলগাছটি আছে, মাস দুই হয় সেখানে বাসা বেঁধেছে এক জোড়া টিয়া দম্পতি। তাদের কিচিরমিচিরে আপনার ঘুম ভাঙে প্রতিদিন। এক সকালে দেখলেন তাদের সংসারে ফুটফুটে দুটি ছানা এসেছে। প্রতিদিন তাদের জন্য খাবার জোগাড় করে আনে মা টিয়া, মুখে মুখ লাগিয়ে তাদের খাইয়ে দেয়। দেখতে আপনার বড় ভালো লাগে, আস্তে আস্তে পুরো পরিবারটার ওপর আপনার মায়া পড়ে যায়।

তারপর হঠাৎ একদিন দেখলেন, ছানা জোড়া নেই। আপনি তখন কী করবেন? হয়তো হা-হুতাশ করবেন। খুব বড়জোর আশপাশে খোঁজখবর করবেন; তারপর বিড়ালে খেয়ে নিয়েছে কিংবা দুষ্ট কোনো ছেলে ছানা দুটি চুরি করেছে ধরে নিয়ে অনুসন্ধানে ক্ষান্ত দেবেন।

দেখা যাচ্ছে, পাবনার বেড়া উপজেলার নয়াবাড়ী গ্রামের সরওয়ার আলম অন্য ধাতুর মানুষ। বাড়ির উঠানের নারকেলগাছ থেকে টিয়াছানা দুটিকে লাপাত্তা হতে দেখে আশপাশে খোঁজখবর করেই হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি তিনি। মুঠোফোনে খুদে বার্তায় পুলিশকে জানিয়েছেন। তার চেয়ে আশ্চর্যের কথা, চৌদ্দ কাজে ব্যস্ত পুলিশ বার্তাটিকে আমলে নিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। আর পুলিশ চাইলে যে সবই সম্ভব, এই আপ্তবাক্য সত্য প্রমাণ করে ঠিকই নয়াবাড়ি-শিলপাড়া গ্রাম থেকে ছানা দুটি উদ্ধার করেছে তারা। বিক্রির জন্য ছানা দুটিকে মা-ছাড়া করেছিল এক পাখিচোর। পরে ছানা দুটিকে আবার মা-বাবার কাছে এনে ছেড়ে দেয় তারা।

সামান্য দুটি ছানার জন্য সারওয়ার আলম আর মহিবুল ইসলাম খানের এত সব তোড়জোড় অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি মনে হবে। মনে হবে, বেহুদা কাজে সময় নষ্ট। আসলেই কি তা–ই? শুধু আত্মীয়স্বজন আর আশপাশের মানুষেই সীমাবদ্ধ নয় আমাদের জগৎ–সংসার। আমার বাড়ির পাশে যে গাছটি আছে, ঘরের ঘুলঘুলিতে আশ্রয় নিয়েছে যে চড়ুই, কাজ থেকে এলাকায় ঢুকলে আমাদের স্বাগত জানায় যে পাড়ার কুকুর, এরা সবাই আমার পরিবারের অংশ, আমার আপনজন; তাদের প্রতিও আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। করোনায় ক্যাম্পাসে না খেয়ে থাকা কুকুরগুলোকে নিয়মিত খাবার দিয়ে সেই দায়িত্বের কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসেনজিৎ কুমার, মাহমুদ সাকী আর তানভীর ইসলাম; টিয়াছানা উদ্ধার করে সেই দায়িত্বই পালন করেন সারওয়ার আলম আর মহিবুল ইসলাম খান। এসব কর্মকাণ্ডই আমাদের আরও বেশি মানবিক করে তোলে।