এক দিনে ১১ বাসে আগুন

সম্পাদকীয়

গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১১টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক। এ নাশকতার ঘটনা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে দুর্বৃত্তরা এ সাহস কোথায় পেল?

আমরা স্মরণ করতে পারি, ২০১৫ সালের পর থেকে রাজপথ জ্বালাও-পোড়াও থেকে মুক্ত ছিল। সে সময় বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অনেক বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু হতাহত হয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতণ্ডা হলেও কারা ওই সব নাশকতা ঘটিয়েছিল, খুব কম ক্ষেত্রেই তা উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। তখন ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এসব নাশকতা ঘটিয়েছেন। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, সরকারি দলের লোকজন কর্মসূচি বানচাল করতে এসব করেছে। স্বস্তির কথা যে আমরা রাজনীতির সেই অন্ধকার পর্ব পার হয়ে এসেছি। গত কয়েক বছরে যেমন দেশে হরতাল-অবরোধ ছিল না, তেমনি রাজপথে নাশকতার ঘটনাও ঘটেনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাসে আগুন দেওয়াকে সন্ত্রাসী ও ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে অভিহিত করে এর নিন্দা এবং দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। আমরাও মনে করি, বাসে আগুন দেওয়া কিংবা বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা রাজনীতি হতে পারে না। রাজনৈতিক দল তো বটেই, নাগরিক মাত্রেরই এ ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ওয়াদা করতে হবে, তারা দলীয় উদ্দেশ্য হাসিল করতে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করবে না। জনগণের কল্যাণের জন্য যে রাজনীতি, সেখানে সন্ত্রাস, মাস্তানি কিংবা দুর্বৃত্তায়নের স্থান থাকতে পারে না। অতীতে কোন দল কখন কতটি নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই বিতণ্ডায় না গিয়েও আমরা বলতে চাই, সরকারি-বিরোধী নির্বিশেষে সব দলের অবশ্যকর্তব্য হবে এসব সমাজবিরোধী শক্তিকে পরিহার করা। কোনো একটি দল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহার করলে অন্যরাও সেই পথ অনুসরণ করবে। অতীতে এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে।

বৃহস্পতিবারের বাস পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২১ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, আদালত তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতিও দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসব ঘটনা বিএনপির ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বাস পোড়ানোর ঘটনায় সরকারি এজেন্টদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা মনে করি, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য করা বা পরস্পরকে দোষারোপ করা উচিত নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের যে ২১ জন নেতা–কর্মীকে বাস পোড়ানোর ঘটনাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাঁদের কোনো রকমের হয়রানি যেন না হয়।

সে জন্য বৃহস্পতিবারের বাস পোড়ানোর ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু, সৎ ও গভীর তদন্ত প্রয়োজন। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং এসব অপরাধ সংঘটনের পেছনে তাঁদের উদ্দেশ্য উদ্‌ঘাটন করে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা; এবং তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। কেননা, পারস্পরিক দোষারোপ থেকে নানা রকমের জল্পনাকল্পনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রয়োজন অপরাধের আইনি প্রতিকার, সে জন্য আইনের দ্রুত ও যথাযথ প্রয়োগ। সাধারণ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক হোক, কিংবা রাজনৈতিক নাশকতা হোক, সব ক্ষেত্রেই আইনের সুষ্ঠু ও সততাপূর্ণ প্রয়োগের ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।