এফবিসিসিআই কী চায়

দেশে এখন ব্যাংক ৬১টি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন ব্যাংক দেওয়ার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যায়ন ছিল, দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ব্যাংক অনেক বেশি। সুতরাং নতুন ব্যাংক দরকার নেই। তারপরও সরকার নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়, যাকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেছিলেন। বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারাও সে সময় নতুন ব্যাংক চাননি। দেশে আদৌ নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কি না, সেই মূল্যায়ন, সমীক্ষা বা প্রস্তাব আসা উচিত ছিল ব্যবসায়ীদের সংগঠন থেকে। আর দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হচ্ছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। মূল্যায়ন বা সুপারিশ দূরের কথা, এখন তারাই চাইছে ব্যাংকের মালিক হতে। কেবল ব্যাংক নয়, তারা বিমা, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ—সবই চাইছে। অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তারা নিজেরাই ব্যবসা করতে নামতে চায়।

সব দেশেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। ইউএস চেম্বার অব কমার্স বা ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট দেখলে তাদের কাজের পরিধি, ভূমিকা ও মর্যাদা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনায় আপত্তি থাকলে পাশের দুই দেশের ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকাণ্ড দেখতে পারেন যে কেউ। অন্য যেকোনো দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের তুলনায় বাংলাদেশের এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য। সুবিধার সন্ধানে আসা অনুগত ব্যবসায়ীদের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হওয়া সংগঠনটি রাজনীতিকরণের কারণে গুরুত্ব ও মর্যাদা হারিয়েছে।

আগামী ৫ মে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগেই প্রার্থী কে কে হবেন, তা চূড়ান্ত করায় আর নির্বাচন হচ্ছে না। সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি কমিটি আগামী দুই বছর নেতৃত্বে থাকবে। ব্যাংক, বিমা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন কমিটিকেই।

অথচ দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা জীবন

ও জীবিকা—দুটোকেই সংকটে ফেলে দিয়েছে। দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর তেমন প্রস্তুতি যে ছিল না, তা–ও স্পষ্ট। উৎপাদন ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ রকম সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশগুলোর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতির মূল্যায়ন করে নানা পরামর্শ তো দিচ্ছেই, নিজেরাও সমস্যায় থাকা ছোট–বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে, নিচ্ছে নানা ধরনের কর্মসূচি। অথচ বাংলাদেশে এফবিসিসিআই যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। দু–একটা বক্তৃতা-বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ তাদের কর্মকাণ্ড।

দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি বেসরকারি খাত। কোভিড পরিস্থিতিতে অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বেসরকারি খাতের ওপর। এ জন্য প্রয়োজন আর্থিক ও নীতি সহায়তা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া নীতি কতটা কার্যকর হচ্ছে, আরও কী ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হবে, এসব যদি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই বলতে না পারে, সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে না পারে, সাধারণ ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে এ রকম এক সংগঠন থাকা বা না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এফবিসিসিআইয়ের নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার এটাই উত্তম সময়।